অভিজিত রায় |
অভিজিত রায় বাংলাদেশের মুক্তমনাদের কাছে একটি অতিপরিচত নাম, যিনি কলমের শক্তি দিয়ে ঘায়েল করেছিলেন জঙ্গিবাদ, মৌলবাদে বিশ্বাসীদের বুক। একারনে তার মুল্য হিসেবে তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছিলো নিজের প্রাণটা। মুক্ত মনের অধিকারী হওয়া বা মুক্ত পথের সন্ধান করা বড়ই কঠিন একটি কাজ। ভারতীয় উপমহাদেশে এই কাজটি কত বিপজ্জনক সেটি প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে অভিজিৎ রায়।
আবহমান কাল থেকেই অসংখ্য মানুষ ধর্মের নামে হানাহানি, বিবাদ, বিভাজন আর বিরোধে জড়িত। এই দল ঐ দলকে হত্যা করছে, এই দল ঝাপিয়ে পড়ছে ঐ দলের উপর, রায়ট, অযৌক্তিকভাবে ধর্মভিত্তিক দেশবিভাগ, কোটি কোটি মানুষের অসীম দুর্ভোগ। কিন্তু যারাই এঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছে তারাই হয়েছে লাশ। এভাবে আর কতদিন চলবে? মানবতা কি আজীবন মুখ থুবড়েই থাকবে?
তিনি চেয়েছিলেন আমরা প্রকৃতিকে চিনব বিজ্ঞানের মাধ্যমে, চিন্তা করব মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। শিশু থেকে আরম্ভ করে সবার মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা বিরাজ করবে, কোনো কিছুর আনুগত্য করা যাবেনা প্রশ্নহীনভাবে।
অভিজিত রায় ছিলেন একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী-মার্কিন প্রকৌশলী, লেখক ও ব্লগার। তিনি বাংলাদেশের মুক্ত চিন্তার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর প্রথম সাড়া জাগানো বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটির নামের মধ্যেই অভিজিৎ রায়কে খুঁজে পাওয়া যায়।
অভিজিৎ শুধু একজন বহুলপরিচিত লেখকই ছিলেন না, ছিলেন একজন অত্যন্ত প্রাণবন্ত মানুষ এবং একটি হৃদয়বান বাবা, স্বামী, ছেলে এবং বন্ধু। আমেরিকাপ্রবাসী অভিজিৎ ছিলেন একজন সক্রিয় ব্লগার এবং যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তক এবং নিরীশ্বরবাদীদের জন্য প্রথম বাংলা আন্তর্জালিক প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তমনা’র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শুধু বিজ্ঞান বা নাস্তিকতা নিয়েই লিখতেন না, তার লেখনী যে কোন ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যে কোন ধরনের অবিচার, কুসংস্কার অথবা বৈষম্যের প্রতিবাদে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলো। তার লেখা বই ও ব্লগগুলোর বিষয়ের ব্যপ্তির দিকে তাকালেই ওপরের কথাটার প্রমাণ মেলে।
২০১৫ সালে বই মেলা চলাকালীন সময়ে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে ঢাকায় যান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাবেলায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী একটি রিকশায় করে একুশে বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের নিকটে অপরিচিত দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সাক্ষীদের মতে, দুইজন দুষ্কৃতিকারী তাঁদের থামিয়ে রিকশা থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের কোপাতে থাকেন এবং তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর কাঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে এবং বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। উভয়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে যাওয়া হলে অভিজিৎ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মৃত্যুবরণ করেন। রাফিদা আহমেদ বন্যা চিকিৎসার শেষে বেঁচে যান।
আজ অভিজিত রায়ের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আজ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে যাত্রা শুরু হলো এথিস্ট বাংলা ব্লগের। চলো নিই মুক্তির স্বাদ।
0 Comments: