মোটেই বিশ্বাস করতে পারছে না ধর্ম আপনাকে ঠকাচ্ছে?

পৃথিবীতে ৪০০০ ধর্ম রয়েছে
পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরছে। তার মানে হচ্ছে, আপনি যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন আপনাকে সহ সেই জায়গাটি প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার পূর্বে সরে যাচ্ছে। বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে এসেও, এই কথাটি কত জন মানুষই বা জানে? অথচ এটি বিজ্ঞানের একেবারে ব্যাসিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত সত্য কথা। কিন্তু আপনি যদি কোনো অল্পশিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত মানুষের সামনে গিয়ে কথাটি বলেন তাহলে সে কষে আপনাকে একটা থাপ্পড় মেরে দিবে। থাপ্পড় খাওয়ার খুব অদ্ভুত একটি কৌশল তাই না?


তবে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ বিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে এ কথা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। তবে পৃথিবী ঘুরছে এটা যেমন ১০০ ভাগ সত্য, তেমনি আরও একটি সত্য হলো, পৃথিবীতে ৪০০০ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সবগুলো ধর্মই শতভাগ মিথ্যা, ভন্ডামি এবং সুবিধা আদায়ের সুকৌশলী মাধ্যম।

প্রথমে বলি। কেন আমরা বুঝতে পারিনা পৃথিবী ঘুরছে? কারণ আমাদের চোখের এবং জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। কোনো কিছু ঘুরছে বা চলছে সেটা বুঝতে হলে তার পাশে স্থির কোনো বস্তু থাকা চাই। পৃথিবীর আশেপাশেই স্থির কোন বস্তু নেই, যাকে দেখে বোঝা যাবে পৃথিবী ঘুরছে।

বুঝতে একটু কষ্ট হলে আরও সহজ করে বলি। ধরুন আপনি ট্রেনে করে ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছেন। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করে দেখবেন, ট্রেন যদি গাছপালা বা বনের ভেতর দিয়ে যায় তাহলে মনে হবে ট্রেন খুব দ্রুত ছুটছে। আবার যখন ফাকা মাঠের ভেতর দিয়ে যাবে তখন দূরের কোন মোবাইল টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখবেন মনে হবে ট্রেন খুব ধীরে যাচ্ছে। পৃথিবীর আশেপাশে নিকটবর্তী গ্রহ নক্ষত্রগুলোও লক্ষ-কোটি কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। তাই প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া পৃথিবীর ঘূর্ণন পর্যবেক্ষণ করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

ভাবছেন পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে ধর্মের কি সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে। তবে আপাতত এটি একটি উদাহরণ। তবে চলুন আর একটি উদাহরণ দেখে আসি। বিশেষ করে, শরৎকালের সন্ধ্যার একটু পর বা রাতে আকাশে তাকিয়ে দেখবেন, হালকা মেঘের মতো একটি দাগ উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত হয়ে আছে। এর নাম ছায়াপথ। আমাদের পৃথিবী ও সৌরজগত এই 'মিল্কিওয়ে' ছায়াপথের ভেতরে অবস্থিত। এটি প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ বিস্তৃত। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
পৃথিবী থেকে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখতে যেমন
রাতের আকাশে তাকালে মিল্কিওয়ে ছায়াপথকে ঠিক এমন দেখায়। কিন্তু আসলেই কি ছায়াপথ দেখতে এমন? প্রকৃতপক্ষে ছায়াপথ দেখতে মোটেও এরকম না। আগেই বলেছি আমাদের চোখের সীমাবদ্ধতা আছে। সম্পূর্ণ ছায়াপথটি এতই বড় যে, আমাদের দৃষ্টিসীমায় ধরা পড়ে না। তাই আমরা এর ক্ষুদ্রতম একটি অংশ দেখি। ছায়াপথ কে বাইরে থেকে দেখলে অনেকটা মশার কয়েলের মত লাগবে। এবার নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
বাইরে থেকে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ
এবার আসি কাজের কথায়। ঘরের বাহ্যিক অবস্থা যেমন ভেতর থেকে বোঝা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি ধর্মের ভেতরে থেকে ধর্মের আসল রূপ বোঝা সম্ভব নয়। সেটা বুঝতে হলে একটু বাইরে থেকে তীক্ষ্ণভাবে দৃষ্টিপাত করতে হবে।

আমরা যে সমাজে বসবাস করি, ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠা হয়। জন্মের শুরু থেকেই যেমন আমাদের পিতা, মাতা আত্নীয় স্বজনদের চিনি দেয়া হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আরো একজন ব্যক্তিকে চিনিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি হচ্ছেন ঈশ্বর। তবে আমরা বাবাকে দেখেছি, মাকে দেখেছি ভাইকে দেখেছি, বোনকে দেখেছি। কিন্তু ঈশ্বরকে কি দেখেছি? না তো, দেখিনি। তিনি অদৃশ্য। অনুভব করেছি? না। কোথাও তার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পেয়েছি? Absolutely না। শুধু আমরা একা নয়। আমাদের বাবারাও দেখিনি, তাদের বাবারাও দেখিনি, এবং তাদের বাবারাও দেখিনি। তাহলে দেখেছে টা কে?

আজ পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কেউ খুঁজে না পেলেও আমরা মন প্রাণ দিয়ে তাকে ভক্তি করি। বিপদের সময় তাকে ডাকি, ভয় পেলে তাকে স্মরণ করি। এই অস্তিত্বহীন সত্তাকে দেখতে বা বুঝতে না পারলেও মনের ভেতর তার জন্য একটা বিশেষ স্থান রেখে দিয়েছি। সে যেন চিরচেনা আপন কেউ।


পথে-ঘাটে শহরে-বন্দরে সব জায়গায় ঈশ্বরের গুনোগান শোনা যায়। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রেরিত বার্তাবাহকদের সুনাম অহরহ। হাজার হাজার বই পুস্তক লেখা হয়েছে তাদের নামে এবং সুনামে। পৃথিবীতে শত কোটি ভক্ত আছে তাদের। যারা ঈশ্বর এবং তাঁর প্রেরিত বার্তাবাহক দের জন্য জীবনও দিতে পারে। পৃথিবীতে প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে মাহফিল, সভা ও সমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সুনাম ও গুণগান করা হয়। অথচ তাকে কোনো দিন দেখিনি।

চারপাশে যখন এতো পজিটিভ, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেউ যদি এসে বলে ঈশ্বর নেই। ধর্মগুলো মানুষেরই সৃষ্টি। কিছু মানুষ নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য নিজেকে ঈশ্বরের প্রেরিত দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা ছিলো খুনি। সম্পদ এবং নারীলোভী ইত্যাদি। শুনে রীতিমত হৃদয়ে ধাক্কা লাগবে। মনে হতেই পারে, তরোয়াল টা নিয়ে এসে তার মুন্ডুটা দুভাগ করে দিতে। এবং অনেকে সেটা করেও। তবে ঈশ্বরকে আমরা কেউই দেখিনি।

শুনতে তেতো হলেও সত্য এই যে, আমাদের ভেতর ৮০ ভাগ ধার্মিকই নিজের ধর্ম গ্রন্থের পাতা উল্টিয়েও দেখেনি ধর্মগ্রন্থে কি লেখা আছে। ধর্মগ্রন্থের ভাষা ভিন্ন হওয়ায়, অনেকে পড়ে কিন্তু বুঝে না। বাকি ১০ ভাগ? এরাই হচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ী। এরা পড়ে এবং বোঝেও। দুঃখ, এটাই তাদের রুটি-রুজি।  এই ১০ ভাগ ধার্মিকদের কথায় বাকি ৯০ ভাগ উঠে আর বসে।

গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন মাজারে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী আসে কাঠালের পাতা পড়া, চিনি পড়া, ডিম পড়া ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ সারাতে। গুজব শুনে, বাঁশের কঞ্চির পানি খেয়ে রোগ ভালো করার জন্য হাজার হাজার মানুষ ভোর রাতে উঠেছিলো একবার। কিছুদিন আগেও উত্তরবঙ্গে একটা গুজব উঠেছিলো, বিলের পচা কাদায় গোসল করলে নাইক সব রোগ সেরে যাচ্ছে। ভারতে গরুর মুত্র খেতে শোনা যায় প্রায়ই। তারা এগুলোকে মনে প্রাণে সত্য ভেবেই পালন করে।

কি হলো? বোরিং ফিল করছেন? মনে হচ্ছে এসব কথা শুনিয়ে লাভ কি, এসব তো ভন্ডামি। হ্যা, এগুলো আপনার কাছে মনে হচ্ছে পুরাই ফালুতু এবং ভন্ডামি। তবে জানেন কি আপনার প্রিয় ধর্ম আপনার কাছে যেমন সত্য, তারা এগুলোকে ঠিক একই ভাবে সত্য মনে করেই এ ধরনের পাগলামি করে যাচ্ছে? আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন এবং হিন্দুদের গো-মুত্র খাওয়া যেমন আপনার কাছে ভন্ডামি মনে হয়, আপনার ধর্ম বিশ্বাসও, অনেকের কাছে ভন্ডামি মনে হয়!

ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিন ধর্মের পেছনে অসংখ্য সময় ব্যয় করে, ধর্মের বহু অপ্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলে, অথচ ধর্মের উৎপত্তি এবং তার উদ্যেশ্য খোজার চেস্টাও কোনো দিন করেনি, এমন লোকের সংখ্যা অগণিত।
বন্য প্রানীর বিবর্তন থেকে ধীরে ধীরে মানুষের আবির্ভাব
পৃথিবীতে মানুষ আবির্ভাবের ইতিহাস
পৃথিবীর বয়স ৫০০ কোটি বছর। পৃথিবীতে আজ থেকে প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে জীবনের উদ্ভব। ফসিল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আজ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশে অস্ট্রালোপিথেকাস জাতীয় প্রাণীরা বাস করত। এবং আজ থেকে ১৫ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাস (“দন্ডায়মান মানব”) এর আবির্ভাব ঘটে। হোমোস্যাপিয়েন্স বা মানুষ কমপক্ষে ২ লক্ষ বছর আগে এই পৃথিবীতে এসেছে।

ঐতিহাসিকদের তথ্য অনুযায়ী ধর্মের ইতিহাস
মানুষের আবির্ভাব আজ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে হলেও ধর্মের ইতিহাস কিন্তু সে তুলনায় খুবই নগন্য। আজ থেকে ১০ হাজার বছর বা তার আগে মানুষের চিন্তা, ভাবনার উন্নতি হতে থাকে। এর আগেই তারা ভাষা আবিষ্কার করে ফেলে। সেসময় মানুষ ‘প্রাকৃতিক পরিবেশে’ বসবাস করতো। আদিম কাল থেকে তারা নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতো। ঐ সমস্ত দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য নানাবিধ প্রাকৃতিক শক্তির কাছে প্রকাশ্যে বিনয়ের সাথে আত্মসমর্পন করে কান্নাকাটি করতো এবং খুশি করার জন্য পূজো ও দিতো। এভাবে ভয়ের কারণে আত্মরক্ষার তাগিদে শুরু হয় প্রকৃতিপূজা বা ধর্মীয় আচরণ। সেখান থেকেই মুলত ধর্মের সৃষ্টি। আজ থেকে ৬ হাজার বা ৭ হাজার বছর পূর্বে পৃথিবীতে ধর্মের আবির্ভাব ঘটে।
সভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ
কোনো কিছু যেমন একবারে পরিপূর্ণ হয়না, ধর্মও ঠিক তেমন। সময়ের ধাপে ধাপে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামুলকভাবে কিছু কিছু বুদ্ধিমান লোকের আর্বিভাব হয়। তারা নিজেকে নেতা বা অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা মুরব্বী বা অভিভাবক হিসেবে নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে নানাবিধ দাবি খাটাতো। এছাড়া বিপদ আপদ না আসার জন্য নানাবিদ তন্ত্র মন্ত্র, পূজো প্রার্থণা এসব ছিল তাদের মৌলিক দায়িত্ব। এভাবে যুগ ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এরা হয়ে উঠলো এক শ্রেণীর অঘোষিত “সমাজ সর্দার”। কোনো দেবতার দ্বারা সাহায্য লাভ কিংবা কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে কখন কি ভাবে মোকাবেলা করতে হবে তার দায়ভাগ তাদের উপর গুরু দায়িত্ব হিসেব অর্পিত হলো।

বিনিময়ে সেই ব্যক্তি সমাজের নানাবিধ সুযোগ সুবিধাও হাতিয়ে নিতে থাকলো। তাদের হাতে থাকতো উপাসনালয়ের কর্তৃত্ব, অদৃশ্য ইশ্বর কিংবা দেবতাদের কাছে নিজেদের ভুল ত্রুটির কৈফিয়ত দিতো। এভাবে গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত (কিংবা স্বঘোষিত) ইশ্বরের প্রতিনিধিরা কালের স্রোতে নিজেদেরকে সমাজসেবী হিসেবে করেছে প্রতিষ্ঠিত। প্রথমে তা করা হয়েছে নিজ এলাকায়, নিজের সমাজে। যেখানে সামাজিক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলায় ছিল ভরপুর। এই সমাজ সেবা করতে গিয়ে পৃথিবীর মানুষের মাথায় নানাবিধ আইন কানুন বাধ্যতামুলক ভাবে বেধে দেয়া হয়। ধীরে ধীরে এভাবেই সৃষ্টি হয় ধর্মের এবং ধর্ম প্রচারকদের।

ধর্মের ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীতে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশী ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল। এতদ্ব্যতীত ভারতে এবং ইউরোপের গ্রীস ও ইতালীতে ধর্মের প্রবল প্রতাপ ছিল। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, একেশ্বরবাদী বা ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ইত্যাদি ইব্রাহিমীয় ধর্ম।

বিজ্ঞান এবং ধর্ম
আধুনিক বিজ্ঞান এবং ধর্মগুলোর মধ্যে সাংঘর্ষিকতায় পূর্ণ। অধিকাংশ ধর্ম মতে, ঈশ্বর এক জোড়া মানুষ পৃথিবীতে ফেলে দেয়, সেখান থেকে সন্তান জন্ম দিতে দিতে আজকের এই অবস্থা। তবে বিজ্ঞান বলে, পৃথিবীতে এক জোড়া মানুষ একবারে আসেনি। কোটি কোটি বছর ধরে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে বিভিন্ন প্রাণীর বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের মানুষ সৃস্টি হয়েছে। এবং ভাষা, পোষাক, আবাস একবারে তৈরি হয়নি। এবং মানুষ এখনও বিবর্তিত হচ্ছে।

বিভিন্ন ধর্মে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে আকাশ ও পৃথিবী সৃস্টি হয়েছে মাত্র সাত দিনে। তবে আধুনিক বিজ্ঞান বলে পুরো মহাবিশ্ব তৈরি হতে (আজকের অবস্থানে আসতে) ১৩.৭৫ বিলিয়ন লেগেছে। এবং আকাশ বলতে আদতে কিছুই নেই। উপরের দিকে তাকালে আমরা যে নীল আকাশ দেখতে পাই সেটা হচ্ছে আমাদের দৃষ্টিভ্রম।

এছাড়াও ধর্মের হাজারও কুসংস্কার, বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞা, আদেশ, নির্দেশ মানুষকে বিজ্ঞান চর্চায় এবং স্বাভাবিক বা মুক্ত জীবনযাপনে বাধা দেয়। শুধু বিজ্ঞান নয়, এটি সামাজিক ভাবেও অত্যান্ত ক্ষতিকর। ধর্ম একজন নারীকে পন্য হিসেবে তুলে ধরে। পৃথিবীতে জঙ্গিবাদের মুল কারণও ধর্ম। (সংক্ষেপিত)

- লেখকঃ মোমিন শেখ

তথ্যসুত্র
https://bn.wikipedia.org/wiki/বিশ্বের_ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/মানুষ
https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাবিস্ফোরণ_তত্ত্ব

ধর্মের চিপায় নামের বিড়ম্বনা - কাঁধে যখন বিদেশী সাংস্কৃতি

ধর্মের চিপায় নামের বিড়ম্বনা
মজমা'য় তাবিজ বিক্রেতা মলম বিক্রেতার মতো লোকস্বরাগমের আপ্যায়নের জন্য আপনাকে ডাকতে পারবো না তবে এতটুকু নিশ্চিত হাত পা'য়ের মতো চোখ গুটিয়ে চলে যাওয়া পাঠকদের দীর্ঘ লেখা পড়ার শ্রম পণ্ডশ্রম হবে না লেখক হিসেবে অতটুকু আশাবাদী আমি।

এ লেখাতে যে কয়টি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট তুলে ধরার চেষ্টা করবো তা হলো -
  • মিথ্যাচারের মাধ্যমে এ উপমহাদেশে আরবীয় সংস্কৃতির প্রচলন।
  • পূর্বপুরুষদের অজ্ঞতার দায়ভার একজন মানুষ শিশুকাল হতে বেঁচে থাকা অবধি বহন করে চলা।
  • বিবেকের আদালতে নামের তাৎপর্যয় ।
  • সুন্নত সংস্কৃতি এবং অপসংস্কৃতি ।


একজন মানুষের আজীবন বহন করে চলা একটি বিশেষ্য হলো নাম। মনে করুণ ছোট বেলায় আপনার পিতামাতা অজ্ঞতাবশত আপনার নাম রেখে দিলো "গাধা"। মৃত্যু অবধি এই "গাধা" নামটা নিয়েই আপনার কালপাত করতে হবে।

কি? উদ্ভট লাগছে? আপনি হয়তো ভাবতে পারেন জেনে বুঝে কেউ তার সন্তানের নাম "গাধা" রাখতে পারে না। কিন্তু আমরা অজ্ঞতাবশত নিজেরাই এ'সমস্ত নাম রাখি। কিভাবে তা আস্তে আস্তে খোলাসা করছি।

বাংলাদেশে সাধারণত ধর্মের উপর ভিত্তি করে'ই নাম রাখা হয় যেমন ইসলামি নাম, হিন্দু নাম, খ্রিষ্টান নাম। ব্যাপারটা কতখানি যুক্তিযোগ্য তা আমি মধ্যপন্থী হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবো।

একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি-
বাচ্চাদের প্রতি ঝোঁকটা আমার কম দিনের নয়। যদি ও স্বর্গীয় ফরগীয় আমি বিশ্বাস  করি না তবুও বাচ্চা দেখলে মনে হয় স্বর্গীয় অবতার । বাচ্চাদের সাথে আমার আবার  জমে'ও ভালো। যা ই হোক মূল ঘটনায় আসি প্রচন্ড চাপ ঠেলে লেগুনা'য় উঠলাম। ঢাকা শহরে লেগুনা'কে বলা চলে গরীবের মাসিহা। আমার ঠিক সামনের সিটে বোরখা পরা একজন মহিলা বসা চোখ দুটো ছাড়া কিছুই দেখা যায় না তার কোলে প্রচন্ড আদুরে একটা শিশু ঘুমে কাতর হয়ে আছে। ছোটবেলায় মায়ের মুখে রুপকথার গল্প শুনেছিলাম সাগর নাকি কাছে টানে এইরকম কিছু শিশু দেখলেই বোধহয় তারা শুধু কাছে টানে। কয়েকবার ভেংচি কাটায় শিশুটি চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে কয়েকবার পায়ের আঙুল ধরে ও টান দিয়েছি।

আমাকে ছোঁয়ার জন্য শিশুটি হাত বাড়িয়েছিলো। আমার ও খুব ইচ্ছে করছিলো শিশুটিকে স্পর্শ করবার তৎক্ষণাৎ পুরনো একটি স্মৃতি আমার মস্তিষ্ক চারণ করলো রাজধানীর পল্টন এলাকায় একবার খুব আদুরে একটা শিশুকে আদর করার অনুমতি চাওয়ায় তার পিতামাতার কড়া সূর শুনতে হয়েছিলো। থাক সে হৃদয় বিদারক কাহিনী আর মনে করতে চাই
না। অত:পর বোরখা পরা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম - ওর নাম কি?
বললেন - হুরায়রা।
কিছুটা ব্যাথিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম - কে দিয়েছে নাম?
উনি জবাব দিলেন - ওর বাবা।
অপরিচিতদের সাথে বাড়তি কথাবার্তা আমি তেমন পছন্দ করি না তাই উনাকে নাম
সংক্রান্ত জটিলতায় ফেলিনি।
শুধু বলে দিয়েছি ওর বাবাকে একটু জিজ্ঞেস করবেন এ নামের বাংলা অর্থ কি।

যেহেতু নামের সাথে ধর্মের একটা যোগসূত্র আছে তাহলে চলুন এবার একটু আরবীয়
ইতিহাস দেখে আসি। ইসলাম গ্রহণের পর নবী মুহাম্মদের অনেক সাহাবি'র নাম তখনকার অনেক পৌত্তলিক বা
ইহুদী খৃষ্টানদের নামে ছিলো । যেমন ধরেন নবী মুহাম্মদের দুজন দাসীর নাম ছিলো মারিয়া এবং রিহানা। আরবে তখন মারিয়া এবং রিহানা নামক মুসলিম নারী ও ছিলো আবার ইহুদী নারীর নাম ও ছিলো । ধর্ম গ্রহণ বা পরিবর্তনের আগে পরে কারো নামের'ই কোনো পরিবর্তন হয়'নি।

সাদ্দাম হোসেনের খুব কাছের একজন বন্ধু্র নাম তারেক আজিজ । সাদ্দাম হোসেনের পরামর্শদাতা এবং ইরাকের বিখ্যাত রাজনিতিবীদ।নাম মুসলিম টাইপের হলেও তিনি ছিলেন ক্যালিডিয়ান খ্রিষ্টান। সুতরাং এ কথা এখন স্পষ্ট যে নামের কোনো ধর্ম নেই। নাম কোনো ধর্মের ব্যাক্তিগত সম্পদ নয়। নবী মুহাম্মদের জন্মের পূর্ব হতেই মক্কাবাসীরা তাদের পূর্বপুরুষদের নামের সাথে সংযুক্ত রেখে নাম রাখতো অন্তত দশপূরুষ পর্যন্ত তারা মনে রাখতো মজার ব্যাপার হচ্ছে মক্কাবাসীরা পশুপাখির সাথে মিলিয়ে ও নাম রাখতো এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম পশুপাখির সহিত মিলিয়ে নাম রাখা সংস্কৃতি চালিয়ে যেত।

যেমন ধরুন, আমার বাবার নাম বকর। তাহলে আমাকে ডাকা হবে রিয়াজ বিন বকর। এবার আসুন উল্লেখিত ঘটনার সহিত সম্পৃক্ত দুটি আরবী নামের অর্থ জেনে নেই।

আবু হুরায়রা= বিড়ালের পিতা

আবু বকর= ছাগলের পিতা ।

এই রকম কুরানের সূরার নামের ক্ষেত্রে ও হয়েছে যেমন ধরেন - বাকারা শব্দের অর্থ " গবাদিপশু "।

ঘাড়ের উপর দেড় কেজি ওজনের মস্তিষ্ক খাটিয়ে আপনার বিবেক কি অনুমতি দেবে আপনার সন্তানের নাম "বিড়ালের পিতা" "ছাগলের পিতা" এ সমস্ত নাম রাখার? প্রশ্ন রইলো আপনার কাছে।

এ দুটো নাম শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে এ'রকম অসংখ্য আরবী নাম রয়েছে যা আমরা এখনো নিজেদের সন্তানদের নাম রেখে আসছি ।

আমাদের বলা চলে "আমরা হুজুগে মাতাল" । এ হুজুগে মাতাল নিয়ে একটি ছোট্ট গল্প বলা যাক-

আন্তা ইবনে সাদ্দাত, আসমা বিনতে মারওয়ান, আব্দুল আজিজ সহ বেশ কিছু কবির কবিতা আবৃতি ছোট বোনের ফোনে সংরক্ষণ করে রেখেছি সেগুলো লেখা হয়েছিলো নবী মুহাম্মদের বাবা'র দাদা'র আমলে (আসমা ব্যাতিত) ।
কুরানের আয়াতের মতো টেনে টেনে আবৃতিকে পরিবারের সবাই ভাবলেন আল্লাহ্‌ পাক বোধহয় হেদায়েত দান করেছেন তাই আমি কুরান তিলাওয়াত শুনছি। সবার কানাঘোসা দেখে জিজ্ঞেস করলাম- কি শুনছেন? উত্তর দিলেন- কি মধুর কুরানের আয়াত। শুনলেই প্রাণ জুড়ায়।

বুঝতে'ই পারছেন আমাদের অজ্ঞতার স্থান কত গভীরে। শতকরা হিসেব করে আমি ধর্ম অধর্ম বিচার করি না তবুও বলা লাগে এদেশের বেশিরভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো একটু বেশি'ই অজ্ঞ এবং কট্টরপন্থী।


এবার আসুন দেখে নেই নাম রাখা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে বা নবী মুহাম্মদ নাম রাখা সম্পর্কে কি কি বলে গেছেন। নাম রাখা সম্পর্কে কঠোর বিধিনিষেধ বা নির্দেশনা ইসলাম কখনো দিয়েছে কি না তা আমার জানা দেই তবে কিছু জাঈফ হাদিস হাসান হাদিস আছে সেগুলো ইসলাম তেমন গুরত্ব দেয় না।

তবে মুসলিম শরিফের নিম্নোক্ত হাদিসটি সকল স্কলারদের কাছেই গ্রহণযোগ্য এবং সত্য বলে মনে হয়েছে -

ইবনু উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও  আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।”
- [সহীহ মুসলিম] হাদিস- ৫৪০২

আব্দ শব্দের অর্থ বান্দা । সে সূত্রে আপনি আপনার সন্তানের নামের পূর্বে আব্দ শব্দটি ব্যাবহার করতে পারবেন। যেমন ধরুন-

আব্দুল কারীম (সম্মানিতের বান্দা)
আব্দুর রহীম (করুণাময়ের বান্দা)

অনুরুপ, "আব্দুন নবী" বা এইরুপ বহু নামকে ইসলাম হারাম করেছে মাখরুহ করেছে যার কোনো লিখিত দলিল আছে বলে মনে হয় না। ইসলামের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে এসব আমার শুধু বেদআত ই মনে হবে।

গুগলে সার্চ দিয়ে আপনি ইসলামের মাখরুহ নাম দেখতে পাবেন, হারাম নাম গুলো ও পাবেন উত্তম নামগুলো ও পাবেন । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলাম নাম সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা দিয়েছে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে উপরে উল্লেখিত মুসলিম হাদিসটির  হাদিসের মান সম্পূর্ণ সহিহ। শয়তানের নাম রাখা হারাম, উপাসকের নাম রাখা হারাম, চন্দ্র সূর্যের বান্দা ইত্যাদি নাম রাখার হারামের গ্রহণযোগ্য দলিল কতখানি সত্য তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যাক এব্যাপারে আমি স্কলার নই সুতরাং এ ব্যাপারে আর কথা না বাড়াই।

এবার আসি সুন্নত এবং সংস্কৃতি বিষয়ে -
সংস্কৃতি একটি দেশের ভৌগোলিক, সামাজিক, জৈবিকসহ নানা বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত হয় । আরেকটু স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে ভৌগোলিক, সামাজিক, জৈবিকসহ নানান বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি পৃথক পৃথক ভাবে গঠিত হয়। নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে বসে আমরা মরুভুমির দেশ আরবের সংস্কৃতি অনুকরণ অনুশীলন করি তা নিছক হাস্যকর। তারা খেজুর খায় বলে আমরা ও খেজুরকে সুন্নতি ফল মনে করি ভৌগলিক অবস্থানের কারনে আরবদের পরা জুব্বা পায়জামা আমরা সুন্নতি পোষাক মনে করি।

সে সুত্রে বলা লাগে, নবী মুহাম্মদের জন্ম আরবে না হয়ে আইসল্যান্ডে হলে আমাদের হয়তো আজ উল দিয়ে বানানো আপাদমস্তক জ্যাকেট পরে থাকতে হতো শীত গ্রীষ্ম বরষায় জ্যাকেট আর জ্যাকেট আবার আফ্রিকান জঙ্গলের কোনো বর্বর গোষ্ঠীতে হলে হয়তো পশু'র ছাল পরে থাকতে হতো শীত গ্রীষ্ম বরষায় শুধু ছাল বাকল ।

পরিশেষে আপনার সন্তানের সুন্দর বাংলা নাম এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

লেখক - রিয়াজ মোহাম্মাদ নোমান

জন্ম এবং মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ হবে মানুষের ইচ্ছায়

বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ হতে চলেছে অমর
আধুনিক বিজ্ঞান কি নিজেকে ঈশ্বর সমতুল্য করে ফেলছে? ফল খারাপ হবে বোঝা যাচ্ছে। জন্মেছো যখন, মরতেই হবে একদিন। এ ধরনের দুই একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হই প্রতিদিনই। বিজ্ঞানের  সাফল্যগুলো তুলে ধরতে গেলেই সমাজের কিছু লোক গোড়া মেরে দিবে আর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মত প্রকাশ করলে তো প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়ে যাবে। তাই বলে কি বিজ্ঞান থেমে থাকবে? নাহ। বিজ্ঞান থামবে না। চলবে তার আপন গতিতে। বরং থেমে যাবে তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস।

প্রতিটি প্রাণীর কাছেই তার নিজ জীবন সবচেয়ে প্রিয়। অতীতের স্মৃতি, মানুষের ভালোবাসা, পরিচিত মানুষের মুখ ও উপভোগ্য সময়ের কারনে পৃথিবীর প্রতি এক অদ্ভুত মায়া চলে আসে। সবাই জানে একবার পরলোকে পাড়ি জমালে আর ফিরে আসা যায় না। আর এ কারনে, মানুষ বেচে থাকতে চায় অনন্তকাল। সৃষ্টির ইতিহাসে মানুষের সবচেয়ে বড় একটি বাঁধা হল ক্ষনস্থায়ী জীবন। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ বিভিন্ন ভাবে মৃত্যুকে আটকাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো ভাবেই তা সম্ভব হয় নি। মূলত সেগুলোর বেশিরভাগ চেষ্টাই ছিলো অবৈজ্ঞানিক। তবে আশার কথা হলো, এবার তা সত্য হতে চলেছে।


এতোদিন মানুষ জেনে এসেছে জন্ম এবং মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। একুশ শতকে গতিশীল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দাপটে, শেষ এই কথাটিও আর ধোপে টিকছে না। মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিজ্ঞান পা দিতে চলেছে এক নতুন জগতে। জন্ম এবং মৃত্যুর দায়িত্ব থেকে ঈশ্বরকে অবসরে পাঠিয়ে মানুষ হাতে নিতে চলেছে এই গুরুদায়িত্ব। তবে এর জন্য মানবসভ্যতাকে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র ২০-৩০ বছর।

বিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যেই মানুষ অমরত্ব লাভ করার জন্য যে সব প্রযুক্তি দরকার তা গুছিয়ে ফেলছে। তবে এটি অত্যান্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। আমরা বাসায় বসে টিভিতে যে সিনেমা দেখি, এর পেছনে রয়েছে অনেক গুলো প্রযুক্তির সমন্বয়। শব্দ, আলো, রঙ, বিদ্যুৎ, স্থিরচিত্র, এনিমেশন সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি মিলে মিশে যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি হয়, ঠিক তেমনি মানুষকে বাচিয়ে রাখার জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক থেকে কাজ করে চলেছে। যেহেতু এটি অত্যান্ত নিখুদ একটি প্রক্রিয়া, তাই পরিপূর্ণ রেজাল্ট পেতে মানবজাতিকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটা বছর। তাহলে চলুন ঘুরে আসি অমরত্বের গবেষনাগার থেকে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জিন এডিটিং

মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের কোষের কার্যক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। যৌন কোষ ও রক্তের কোষ ছাড়া শরীরের প্রতিটি কোষেই থাকে ক্রোমোজোম থাকে ২৩ জোড়া করে। শরীরের ক্রোমোজমে যে ডিএনএ বা ডিঅক্সি-রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে, তার একটা ‘লেজ’ (টেল) থাকে। সেই লেজটার নাম ‘টেলোমেয়ার’। আমরা যতই বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকি, ততই আকারে ছোট হতে থাকে সেই টেলোমেয়ার। আমরা যদি সেই আকারে ছোট হয়ে যাওয়া টেলোমেয়ারকে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইল্যাস্টিকের মতো টেনেটুনে বাড়িয়ে দিতে পারি, তা হলেই বয়সের হিসেবে আমরা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেও, দেহে ও মনে চিরযুবাই থাকতে পারব।

তাছাড়া বায়ুদূষণ, ধূমপান ও মদ্যপানের মতো  বাইরের কোনও কারণও টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য উত্তরোত্তর কমিয়ে দিয়ে আমাদের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি, জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতি আগামী ১০ বছরের মধ্যেই বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে দূরে হঠিয়ে দেবে। ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র জেনেটিক্সের অধ্যাপক জোসে লুই কর্দেইরো ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ও জিনতত্ত্ববিদ ডেভিড উড সম্প্রতি তাঁদের প্রকাশিতব্য বই ‘দ্য ডেথ অফ ডেথ’-এ এই দাবি করেছেন।

এখনকার সময়ে ফটোশপের নাম শোনেনি এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। কোনো সাধারণ ছবিকে যেমন ফটোশপ এর মাধ্যমে এডিট করে ব্রন, পিম্পল, উজ্জলতা বাড়িয়ে সুন্দর করে তোলা হয়, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনেকটা ফটোশপের মত কাজ করে। জন্মের আগে থেকেই সন্তান কেমন স্বভাবের হবে, গায়ের রঙ, উচ্চতা সহ সব কিছুই আগে থেকেই কন্ট্রোল করা সম্ভব। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মরে যাওয়া কোষ, কলা (কোষের দল বা সমষ্টি, যাকে বলে টিস্যু)-গুলিকে শরীর থেকে বের করে আনা হয়। শরীরের যে কোষগুলি বিগড়ে গিয়েছে, যে ভাবে চলা উচিত, ঠিক সেই ভাবে চলছে না, বরং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে, সেই কোষগুলিকে জিনের প্রযুক্তি দিয়েই সারিয়ে তোলা হয়। সুতরাং এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের শরীর আজীবন রোগমুক্ত এবং সতেজ রাখা সম্ভব হবে।

বার্ধক্য রোধের ট্যাবলেট আবিষ্কার
কফির দামে পাওয়া ট্যাবলেট বার্ধক্য রোধ করবে

ধরুন আপনার বয়স ৬৫। কেমন হবে, যদি এমন একটি ট্যাবলেট পেয়ে যান, যা খেলে আপনার দেহের বয়স ২০ এ নেমে আসবে! ব্যাপারটা কেমন হবে ভেবে দেখেছেন? খুবই অবাক লাগছে তাই তো? তবে অবাক হওয়ার কারণ নেই। কারণ এই রুপকথা সত্যিই হতে চলেছে। একটি পিল খেয়ে ঠেকিয়ে দেয়া যাবে বার্ধক্য-এ রকম একটি ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে যা আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই বানিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। এবং এক কাপ কফির দামেই যদি পাওয়া যাবে এই পিল। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এই যুগান্তকারী গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড: ডেভিড সিনক্লেয়ার।

মানুষের বয়স বৃদ্ধিতে শরীরের চামড়া কুকচে যায়, কোষগুলো ক্ষমতা হারাতে থাকে। তখন আমাদের শরীরের ভেতর যেসব ছোট ছোট রক্তনালী আছে, সেগুলো বুড়িয়ে যেতে থাকে এবং এ পর্যায়ে একদম শুকিয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এবং পেশিকলায় রক্ত প্রবাহ অনেক কমে যায়। ড: ডেভিড সিনক্লেয়ার বলেছেন, মানুষের শরীরের অনেক রোগ-ব্যাধির মূল কারণ কিন্তু এই রক্তনালীর বার্ধক্য। বিশেষ করে বহু ধরণের হৃদরোগ, স্নায়বিক রোগ এটা থেকেই হয়।  রক্তনালীর ভেতরে রক্ত চলাচল বাড়ানোর জন্য নতুন ধরনের ঔষধ আবিস্কার সম্ভব হবে এই গবেষণার ভিত্তিতে।

গবেষকরা দাবি করছেন, এই বার্ধক্য প্রতিরোধী গবেষণা সফল হলে মানুষ দেড়শো বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সেল বা কোষ ব্যবহার করে একেবারে নতুন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তৈরি করা যাবে।

মস্তিস্কের বার্ধক্য রোধ
শরীরের সঙ্গে বয়স বাড়ে মস্তিষ্কেরও। একটা বয়স পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ হয়। তারপর ধীরে ধীরে ব্রেন সেলগুলির মৃত্যু ঘটতে শুরু করে। যার নির্যাস, চিন্তা-ভাবনার স্তর কমতে শুরু করা, ভুলে যাওয়া। তবে আর চিন্তা নেই। এবার বয়স বাড়লেও, মস্তিষ্ক থাকবে চিরযুবক। মস্তিষ্কের বার্ধক্য রোধের এই অবিশ্বাস্য প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন ওন্টারিও'র ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিত্‍‌সা বিজ্ঞানী। এই গবেষনা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানী জেনিফার লেমন। ৩০টি ভিটামিন ও মিনারেলের মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে একটি ওষুধ। ওই ওষুধ ব্রেন সেল নতুন করে তৈরি করবে। ফলে অ্যালঝাইমার, পারকিনসনের মতো অসুখ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকবেই না।

জেনিফার লেমন বলেন, ট্যাবলেটটি ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ব্রেন সেল ড্যামেজ হচ্ছে না। পুরনো সেল মরে গিয়ে, নতুন সেল তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি বাড়ছে, শরীর থাকছে চনমনে। লেমনের কথায়, 'অ্যালঝাইমার, পারকিনসনের মতো স্নায়ুরোগ ঠেকাতে এই আবিষ্কার যুগান্তকারী হতে চলেছে। একটি ট্যাবলেটেই মস্তিষ্কের বার্ধক্য থেমে যাবে এবং হয়ে উঠবে চিরযৌবন।

স্মৃতি সংরক্ষণ
মানব মস্তিষ্ক
মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মস্তিষ্ক। আমাদের সকল স্মৃতি, ইতিহাস, পরিচিতি সবই মস্তিস্কে জমা থাকে। এক কথায় এটি হচ্ছে মানবযন্ত্রের হার্ডডিস্ক। তাই, মানুষের অমরত্বের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে ব্রেইন এর ব্যাকআপ তৈরি করা। আমাদের ব্রেইনের মেমোরি ধারণ ক্ষমতা কমপক্ষে ২ দশমিক ৫ পেটাবাইট অথবা ১ মিলিয়ন জিবি বা ১০ লাখ গিগাবাইট। অধ্যাপক পল রেবর উল্লেখ করেছেন, ব্রেইন যদি কোন সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারের মত মেমোরি ধারণ করে তাহলে সেই মেমোরি যদি কোন টিভিতে অবিরাম সম্প্রচার করা হয় তাহলে ৩ শতাধিক বছর লাগবে তা প্রচার করতে। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের মনকে কম্পিউটারে কপি করে রাখা সম্ভব। তবে কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ বা মেমোরিকার্ড এর সাথে মানুষের ব্রেইনের মেমরি আকাশ পাতাল পার্থক্য। আর এ জন্য এটি সবচেয়ে জটিল প্রকৃয়া।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ব্রেইনে ৮৫-৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকে,  প্রত্যেকটি নিউরন একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত থাকে। একটি নিউরন প্রতি সেকেন্ডে ১,০০০ সংকেত পাঠাতে পারে। একটি গমের দানার সমপরিমাণ মস্তিষ্ক টিস্যুতে ১ লক্ষের মতো নিউরন থাকে, যেগুলো পরস্পরের সাথে এক বিলিয়ন বন্ধন তৈরি করে। নিউরন হলো স্নায়ুতন্ত্রের ইট। এই ইটে নির্মিত স্নায়ুতন্ত্র দিয়েই আমরা অনুভব করি আশপাশের সবকিছুকে। ঠান্ডা কিংবা গরমের অনুভব, ভালো কিংবা মন্দ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত সহ আপনার আমার জীবনের সবগুলো কাজের সাথে জড়িত এই স্নায়ুতন্ত্র।


প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যধারা ও মনের অলিগলি এখনই কম্পিউটারে অল্প পরিমাণে হলেও ধরা সম্ভব হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রযুক্তি দিয়েই মানুষের সব চিন্তাধারার প্রক্রিয়াকে আবেগের সংমিশ্রণসহ হয়তো কম্পিউটার গ্রোগ্রাম হিসেবে আপলোড করা সম্ভব হবে। তাতে জৈব দেহের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে মানুষের। প্রাথমিক ভাবে, মানুষের আদলে কোনো যন্ত্রের মগজেই বেড়ে উঠবে একটি মানুষ নয়তোবা মানুষ মারা গেলে তার স্মৃতিসমূহ সংরক্ষরণ করে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এখন যেমন কম্পিউটারে আমরা একটি সিনেমা সংরক্ষণ করি অনেকটা সেরকমভাবে। তবে আস্তে আস্তে তা আরও রিয়েলিটির দিকে ধাবিত হবে।

গবেষকরা বলছে, আগামী দুই এক দশকের মধ্যেই মস্তিস্কের নিউরন তৎপরতার মানচিত্র তৈরি সম্ভব হবে। যদি মানুষের ব্রেইন কপি করে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়, তাহলে কোনো দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুর হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মৃত্যুর পর কম্পিউটারে থাকা ব্রেইন অন্য একটি দেহের মস্তিস্কে লোড করে দিলেই  আগের মত জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব। এভাবে মানুষের পক্ষে হাজার হাজার বছর বেচে থাকা একবারেই সহজ হয়ে যাবে।

থ্রি-ডি প্রিন্টেড অঙ্গ
থ্রি-ডি প্রিন্টেড হৃদযন্ত্র
দেহকে সতেজ রাখলাম, রোগ জীবানু থেকে দূরে থাকলাম, মস্তিস্কের সুরক্ষা করলাম, স্মৃতি কপি করলাম। কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যদি কোনো দুর্ঘটনায় আমাদের অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ বিচ্ছিন্ন বা নষ্ট হয়ে যায়, অথবা কোনো এক প্লেন ক্রাশে আমার সম্পূর্ণ শরীর ঝলসে গেলো বা সমুদ্রে নিখোজ হয়ে গেলাম। তাহলে কিভাবে অমরত্ব পাবো? কিন্তু এই সমস্যারও সমাধানের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে বিজ্ঞানীরা। আর তা হলো থ্রি-ডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়ের মতো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ‘খেলতে খেলতে’ বদলে দিতে পারি, নতুন নতুন তরতাজা ‘থ্রি-ডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে। স্টেম সেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন রোগজীর্ণ অংশ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে অনায়াসে সারিয়ে ফেলতে পারি। কেও ইচ্ছা করলেই এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের হুবহু কপি তৈরি করে রেখে দিতে পারবে আগে থেকেই।

ইতিমধ্যেই গবেষণাগারে কৃত্তিম পাজর, চোখের কর্নিয়া সহ অনেক অঙ্গপ্রত্যাঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২-১ বছরের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে কৃত্তিম রক্ত। কৃত্রিম রক্তের প্রথম ব্যবহার হতে পারে দুর্লভ ব্লাড গ্রুপের মানুষদের ক্ষেত্রে। গবেষকেরা দাবি করেছেন ইতোমধ্যেই তারা কয়েক লিটার রক্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

আপনি জেনে আরও অবাক হবেন যে, আমাদের বাংলাদেশী মার্কিন জৈব-প্রকৌশলী ড. শুভ রায় এর নেতৃত্বে আবিস্কৃত হয়েছে প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি। কিডনির দুস্প্রাপ্যতার সমস্যা সমাধানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই সাফল্য অভূতপূর্ব। এই প্রযুক্তি সাশ্রয়ী মূল্যে এই বছরই অর্থাৎ, ২০১৯ সালেই পৌঁছে যাবে বিশ্বের লাখ লাখ রোগীর কাছে।

তাহলে একটু ভাবুন, মানুষের মৃত্যুর কারণ গুলো কি কি? দুর্ঘটনা, ক্যান্সার বা জটিল রোগ, বার্ধক্য। এদের প্রত্যেকটি সমস্যা সমাধানের কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকি আর কয়েকটা যুগ।

আজ থেকে দুইশ বছর আগে গিয়ে যদি কাউকে বলি, মোবাইল নামক একটি যন্ত্র আসবে, এবং তা দিয়ে বাংলাদেশে বসে অ্যামেরিকার মানুষের সাথে কথা বলা যাবে। তাহলে পাগল বলে পিটিয়ে মারা হতো নির্ঘাত। কিন্তু সত্য এটাই, যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা ও প্রযুক্তির সম্মিলন মানুষকে বহু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। বিজ্ঞান ছুটছে জ্যামিতিক গতিতে। মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে চলেছে এটাই সত্য, এবং খুব শীঘ্রই। তবে কিছু মানুষ এর অপব্যাবহারও করবে। কিন্তু অমরত্বের সদ্ব্যবহারই হবে মানুষের প্রধান লক্ষ্য। যে যেভাবেই সমালোচনা করুক, বিজ্ঞান কোনো বিশ্বাসের ধার ধারেনা। কেউ সীমা বেধে দিলে বিজ্ঞান তা ডিঙিয়ে চলা শুরু করে।

লেখক - মোমিন শেখ

সুত্র-
https://www.nationalgeographic.com/magazine/2018/03/explore-wellness-3D-printing-body-parts/
https://en.wikipedia.org/wiki/Genetic_engineering
https://www.nature.com/subjects/genetic-engineering
https://en.wikipedia.org/wiki/Mind_uploading
http://www.minduploading.org/
https://www.bbc.com/bengali/news-45389167
https://www.anandabazar.com/others/science/by-2045-death-will-be-optional-claims-two-genetic-engineers-dgtl-1.888138
https://www.timesnownews.com/health/article/a-new-affordable-anti-ageing-pill-that-could-help-humans-live-upto-150-years/280448

নারীর পোষাকের অন্তরালে লজ্জা আর যৌনতার সুঘ্রাণ

নারীর পোষাকের অন্তরালে যৌনতা
বাংলাদেশের সমাজে অনেকেই বলে থাকেন যে পুরুষদের পোশাক পরার স্বাধীনতা আছে
কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে নেই, আমি বলতে চাই বাংলাদেশে নারী-পুরুষ কারো  ক্ষেত্রেই পোশাক পরার স্বাধীনতা নেই, পুরুষতন্ত্রবাদী নিয়মনীতির যাঁতাকলে পুরুষেরাও চাইলেই হাফ-প্যান্ট পরে যেখানে সেখানে যেতে পারেনা, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেতে পারলেও সেই কোনো কোনো ক্ষেত্র হয়ে থাকে শুধুই তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ক্ষেত্রে। হাফ-প্যান্ট পরে অফিসে গেলে তো চাকরিটাই শেষ। আর উপহার হিসেবে অভদ্র তকমা ফ্রী।

আমি একজন নারী, আমি ছোটো বেলায় ছেলেদের মত পোশাক পরতাম, ছেলেদের মত হাফ-প্যান্ট এবং টি-শার্ট আমি ক্লাস টু পর্যন্ত বাসায় পরতাম, ক্লাস থ্রীতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আমার জন্য সালোয়ার-কামিজ বানানো শুরু করা হয় এবং বলা হয় যে আর একটু বড় হলে তুই বুকে ওড়না গায় দিবি, দেখতে দেখতে ২০০৫ সাল চলে এলো, আমাকে ওড়না গায় দিতে বাধ্য করা হলো, আমি তারপর ছোটো বেলার কথা ভাবা শুরু করতাম যে আমি ছেলেদের মত হাফ-প্যান্ট এবং টি-শার্ট পরতাম আর এখন কেমন যেন একটি দূর্বল পোশাক পরা শুরু করছি।


আমি আমার মা-বাবাকে এই ব্যাপারে জানালে আমার মা বলেন ঐগুলো হাফ-প্যান্ট আর টি-শার্ট তো ছেলেদের পোশাক আর তুই ক্লাস সিক্সে পড়িস, বয়স ১৩ হতে যাচ্ছে তুই হাফ-প্যান্ট পরে ছেলেদেরকে তোর পা দেখাবি? এই বছর থেকেই আমি প্রথম ব্রা পরা শুরু করি তবে প্যান্টি তখনো আমাকে কিনে দেওয়া হতোনা। একদিন আমি আমার আম্মুআব্বুর একান্ত আলোচনা শুনে ফেলেছিলাম প্যান্টির বিষয়ে, আম্মু আব্বুকে বলছিলেন আরে প্রতিভা আরেকটু বড় হোক তারপর ও নিজে নিজেই প্যান্টি কিনে নেবে। আমি ক্লাস এইটে থাকতে প্রথম প্যান্টি পরি যেটা আমার আম্মুই কিনে দিয়েছিলেন, এরপর থেকে একাদশ শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে আমি নিজেই নিজের প্যান্টি
কেনা শুরু করি।

আমাদের নারীদের শরীর একটি ট্যাবু - ঠিক আছে পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষদেরও আমাদের দেশের সমাজে তেমন একটা স্বাধীনতা নেই তবে তাদের শরীর এ্যাট লিস্ট ট্যাবু না, তারা বাসায় খালি গায় হয়ে থাকতে পারি আমরা পারিনা, তারা তাদের জাঙ্গিয়া ধুয়ে তারে নেড়ে রাখতে পারে আমরা পারিনা কারণ আমাদের প্যান্টি নিষিদ্ধ এবং গোপন একটা বিষয় বা লজ্জার জিনিস বা ট্যাবু। আমরা কোনো বান্ধবীর বাসায় হাফ-প্যান্ট পরে যেতে পারিনা, আমরা পারিনা সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পরতে যেখানে পুরুষেরা ঠিকই খালি গায় এবং হাফ-প্যান্ট পরে পানিতে নামে কক্সবাজারের সৈকতে।

সব কিছুর পেছনেই কাজ করে পুরুষতান্ত্রিকতা এবং রক্ষণশীল পারিবারিক মূল্যবোধ  যেখানে নারীরা হচ্ছে শুধুই স্বামীর 'জিনিস', নারীরা হচ্ছে একটা বিশেষ প্রাণী যাদেরকে দেখলে পুরুষেরা যৌনাত্তেজনা লাভ করে এবং ধর্ষণ করতে পারে।

আমাদের সমাজে চলা এইসব ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন জরুরী। আমরা আর কত সালোয়ার-কামিজের মত দূর্বল পোশাক পরবো? আমরা কেন বুকে আলাদা একটা কাপড় (ওড়না) পরিধান করবো? কেন
আমরা পুরুষদের যৌন উত্তেজনা ওঠার অজুহাতে আমরা নিজেদেরকে বোরকা নামের একটা  বস্তায় বন্দী করে রাখবো? পুরুষদের মন-মানসিকতা পরিষ্কার করতে হবে, তাদের মাথায় 'নারীরাও মানুষ' ধারণা ঢোকাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা মনে পড়ে গেলো বাংলাদেশের পুরুষেরা বলে যে, 'আরে মাইয়া মানুষ ভাই, হ্যায় তো এরোম কতা কোইবোই', এখানে দেখুন মেয়েদেরকে মানুষ বলা হলেও তাদেরকে 'মাইয়া মানুষ' বলে অবজ্ঞা করা হয়েছে। মানে যোনিসম্পন্ন মানুসেরা শিশ্নধারী মানুষদের চেয়ে দূর্বল  - সব দিক দিয়েই, শরীর-মনন-মেধা সব দিক দিয়েই - এটাই বাংলাদেশের পুরুষদের মগজের  ভেতরে ঢুকে যায় তাদের শৈশবকাল থেকেই।

আমি আমার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে  দেখেছিলাম যে ঐ বান্ধবীর ভাই বাসায় মেয়েদেরকে আসলে পর্দা করে আসতে হবে এরকম বিধান জারি করেছিলো, আবার আরেক বান্ধবীর বাসায় আমার এক ছেলে বন্ধু যেত, প্রথম  প্রথম সে তার নামে কোনো ঋণাত্মক কথা না বললেও পরে তাকে বোঝায় যে আমি ছেলেদের  সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চাইনা কারণ আমার প্রেমিক আছে এবং সে সবসময়ই আমার ঐ ছেলে বন্ধুটিকে বাসায় আসতে দেখলেই নিজের বুকে ওড়না ভালো করে টেনে নিত, পুরুষতন্ত্রবাদী শিক্ষা শুধু নারীদেরকে নয় ছেলেদেরকেও একভাবে অপমান করে।
নারীকে বিবেচনা, পোষাক দিয়ে না

আমি  নিজে কখনোই কোনো ঘনিষ্ঠ ছেলেবন্ধুর সামনে নিজের বুকের ওড়না ঠিক করিনা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওড়না গায়ও দেইনা, আমি এইজন্যে আমার বাবামা এবং আত্মীয়-স্বজন দ্বারা সমালোচিত হয়েছি।

আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেক নারীবাদীই আমার সমালোচনা করবেন, আমি পোশাকের স্বাধীনতা সমর্থন করি তবে এর মানে এই নয় যে বোরকা-হিজাবধারী মেয়েদেরকে আমি সমালচনা করিনা, আমি বোরকা-হিজাব ২০১২ সালে শখ করে পরেছিলাম কিছু বান্ধবীর অনুরোধে, কিন্তু বোরখা-হিজাবের ভেতরে আমি কোনো সৌন্দর্য দেখতে পাইনি, আবার শুধু লাল লাল হিজাব পরে এটার সঙ্গে ম্যাচ করে লাল সালোয়ার-কামিজ পরে ভেতরেও লাল ব্রা এবং প্যান্টি আমি পরেছিলাম আমার বান্ধবীর গিফট পেয়ে, আমার ওটা প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও কেমন যেন পুরুষতান্ত্রিক এবং যৌনঅবমাননাকর পোশাক মনে হচ্ছিলো যে আমার চুলে একটি যৌনাবেদন আছে তাই এটা গোপন রেখে পুরুষদের কৌতূহল বাড়াতে হবে।

আমরা নারী, আমরা মানুষ, আমরা টাকা দিয়ে কেনার জিনিস নই, আমরা নই শুধু স্বামীর  ভোগ্যবস্ত, আমরা কোনো সভ্য-ভদ্র পুরুষদের অপমান করতে চাইনা, তাদের সামনে  (অন্তঃত আমি) ওড়না গায়ে দিতে চাইনা - কারণ এটা একভাবে পুরুষ অবমাননা।

লেখক - তাহরীমা মনির প্রতিভা

প্রেমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ইসলামী নিষ্ঠুরতা

প্রেম ও যৌনতা মানুষের মৌলিক চাহিদা
একজন মানুষ সে নারী বা পুরুষ যে লিঙ্গেরই হোক বা কেন যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন সে প্রেমসঙ্গীর আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে, এই প্রেম সঙ্গী হতে পারে তার সমলিঙ্গের অথবা তার বিপরীত লিঙ্গের। বিশ্বের প্রত্যেকটি সভ্য দেশে প্রতিটি নারীপুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক হলেই তাদের নিজের পছন্দমত প্রেমসঙ্গী বাছাই করার স্বাধীনতা রাখে; অথচ মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে মানুষের প্রেমসঙ্গী স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার অধিকার তো দূরের কথা; প্রেম বা যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা করাই একটা নিষিদ্ধ বিষয়।


প্রেম এবং যৌনতা হচ্ছে মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা, ইসলামের প্রবর্তক মোহাম্মাদ নিজেও বহু নারীর দেহভোগ করেছেন, তার অনুসারীদেরকে দিয়ে যুদ্ধবন্দিনী সম্ভোগ করিয়েছেন অথচ মোহাম্মাদ তার বানানো আইনে নারীদের স্বাধীনতা কিংবা নারীদের ইচ্ছা/সম্মতিকে প্রাধান্য দেননি, চালু করেছিলেন পুরুষতান্ত্রিক বিয়ে যেখানে পুরুষের সব প্রাধান্য; আর্থিক দিক দিয়েও আবার যৌনতার দিক দিয়েও এবং মোহাম্মাদ সমকামিতাকেও নিষিদ্ধ করেছিলেন।

সূরা আল-আরাফ এর ৮০ থেকে ৮১ আয়াত দেখুনঃ

"এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ?"

"তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।"

যদিও মোহাম্মাদের এই লূত নবীর কাহিনী ইহুদী-খ্রিষ্টান ধর্ম থেকে ধার করা, কিন্তু তাও মোহাম্মাদ সমকামিতার বিরোধিতা করতেন তা আপনাদের কাছে আমি পরিষ্কারভাবে বুঝাচ্ছি আরো কয়েকটি তথ্যসূত্রের মাধ্যমে। যেমনঃ সূরা আশ-শোয়ারার ১৬৫ আর ১৬৬ নং আয়াত সমকামিতা সম্পর্কেই

" সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর?"

" এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।"

কোরআনের ২৭নং সূরা আন-নমলের ৫৪ থেকে ৫৭ নম্বর আয়াতঃ

"স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।" 

আয়াতটিতে শুধু নারীরাই ভোগ্যবস্তু এরকমটা বোঝানো হয়েছে যা স্পষ্টঃতই নারীঅবমাননা।

একটি হাদীস দেখুন এই ব্যাপারেঃ

"ইবনে আব্বাস বলেন, রসুল (সঃ) বলেছেন, তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করতো তা করছে, তবে হত্যা করো যে করছে তাকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।" (আবু দাউদ, ৩৮ঃ৪৪৪৭)

বর্বর মোহাম্মাদ সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে রেখে গিয়েছিলেন যা আজ সৌদি আরব, ইরানের মত অসভ্য দেশগুলোতে পালিত হয়।

মোহাম্মাদ যদিও প্রেম করে বিয়ে করার (বিপরীত লিঙ্গের কাউকে) বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলেননি কিন্তু যেহেতু ইরান কিংবা সৌদি আরবে প্রেম করলে যিনার দোষ দেওয়া হয় তাই এ সম্পর্কিত কোরআনের এবং হাদীসের উদ্ধৃতি দেখাচ্ছিঃ

সূরা আল-মায়িদার ৫ নং আয়াতঃ

"তোমাদের জন্য হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান করো তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়"

আয়াতটির শেষ কথা দেখুন 'গুপ্ত প্রেম' অর্থাৎ নর-নারীর সম্মতিমূলক পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আবার দেখুনঃ

"মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা সম্পর্কে অবগত আছেন। " (সূরা নূর : ৩০) 

দৃষ্টি নত রাখলে কিভাবে একজন মানুষ তার প্রেমসঙ্গী নির্বাচন করবে? এখানেও নিষেধাজ্ঞা।

আবার নিম্নোক্ত আয়াতটি দেখুনঃ

"হে, নবী পত্নীগন! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি (পরপুরুষ) কুবাসনা করে,যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। "(সূরা আল-আহযাব : ৩২) 

'কুবাসনা', 'ব্যাধি' দ্বারা এখানে স্পষ্টঃতই প্রেমের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে।

কোরআনের সূরা বনী-ইসরাইলের ৩২ নং আয়াত দ্বারাও একভাবে প্রেমের বিরোধিতার প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ

"আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা আশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ"। (সূরা বনী-ইসরাইল : ৩২) 

আবদুল্লাহ ইবনু মাসুদ (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।" (বুখারী, মুসলিম, মিশতাক হা/৩০৮০ নিকাহ অধ্যায়) 

দেকুন উপরের হাদীসটি ভালো করে এখানে মোহাম্মাদ পুরুষতন্ত্রবাদী বিয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন, প্রেম করে বিয়ে করার প্রতি নয়।

আবার দেখুনঃ

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “লালসার দৃষ্টি চোখের ব্যভিচার, লালসার বাক্যালাপ জিহবার ব্যভিচার, কামভাবে স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, এ উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার, অশ্লীল কথাবার্তা শুনা কানের ব্যভিচার, কামনা বাসনা মনের ব্যভিচার, গুপ্তাঙ্গ-যা বাস্তবে রূপদান করে কিংবা দমন করে।”(বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি) 

এখানে কিন্তু মোহাম্মাদ প্রেম করার কথাই বুঝিয়েছেন।

"আল্লাহ তোমাদের (মানব জাতির) মধ্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য (বিপরীত লিঙ্গের) জুড়ি, যাতে করে তোমরা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। এ উদ্দেশ্যে তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন হৃদ্যতা- বন্ধুতা আর দয়া-অনুগ্রহ-অনুকম্পা। এতে রয়েছে বিপুল নিদর্শন চিন্তাশীল লোকদের জন্য। ”(সূরা আর-রুম : ২১) 

উপরোক্ত কোরআনের আয়াতেও রক্ষণশীল এবং পুরুষতান্ত্রিক বিয়ের পক্ষে কথা বলা হয়েছে। নারীদেরকে বোরকা পরতে বলা হয় তাদের চেহারা গোপন রাখার জন্যেই, এখানেও প্রেমের বিরোধিতার আভাস পাওয়া যায়।

লেখকঃ সোমা আজাদ (ছদ্মনাম)

দুর্গা প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি এবং পৌরাণিক এক পতিতার জয়গাঁথা

দেবী দুর্গা
বাংলায় শারদীয় দুর্গোৎসব চলছে। শাস্ত্র বলে দুর্গতিনাশিনী দুর্গাদেবীর মায়ের আদল ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিষ আবশ্যক৷ যেমন, গোমূত্র, গোবর, ধানের শিষ, পবিত্র গঙ্গার জল আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হবে দেবীমূর্তি৷ আর এই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷ কিন্তু কেন এই রীতি ? সমাজ যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে যাঁদের দেওয়াল বেয়ে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি, তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ৷ কিন্তু কেন?
‘যেখানে উড়ে রুদ্রের চিঠি, বোদলেয়ারের মেঘদল
যেখানে বিসর্জিত নারী-পুরুষের অর্জিত বোধ সকল
যে ঘর অনাহূতেরে ডাকে আহূতের সুরে-স্বরে
পতিতালয়ের প্রবেশদোরেই শুদ্ধতম মাটি আছে পড়ে"!

দুর্গা পূজার মহাস্নানে ‘বেশ্যাদ্বারের মাটি’ লাগে ৷ সংস্কৃত শব্দের অর্থ না জানার ফলে নাকি বিভ্রান্তিতে পড়ছে অনেকে৷

“অভিষিক্তা ভবেৎ বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে”। -মহানির্ববান তন্ত্র৷

“পূর্ণাভিষেকো দেবেশি দশ বিদ্যাবিধোস্মৃত” দশ মহাবিদ্যার উপাসকগণই পূর্ণাভিষেকে অধিকারি অন্যে নহে৷—কুলার্ণব তন্ত্র ৷

দীক্ষা পুরশ্চরণঃ পূর্ণাভিষেক মন্ত্রচৈতন্য হওয়ার ফলে যিনি দেবত্বে উন্নীত হয়েছেন, এরকম অভিষিক্তাকে বেশ্যা বলা হয়েছে, অার উনারা যেখানে বাস করেন সেই দ্বারের মাটিকে বলা হয়েছে পবিত্র মাটি৷

একটা পুরুষ যখন পতিতার বাড়ি গিয়ে অবৈধ যৌনাচার করে তখন ঐ পুরুষের জীবনের সমস্ত পূণ্য পতিতার বাড়ির মাটিতে পতিত হয় বা পূণ্য তাকে ত্যাগ করে, বিনিময়ে ঐ পুরুষ পতিতার ঘর থেকে নিয়ে আসে তাঁর সমস্ত পাপ। এরূপ বহু পুরুষের অর্জিত সমস্ত পূণ্য ত্যাগে পতিতাদের ঘরের মাটি পূণ্যময় হয় বলে মনে করা হয়, তাই পতিতার ঘরের পবিত্র মাটি প্রয়োজন হয় দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরীতে।

দেবী দুর্গা কে? দেবদ্রোহী মহিষাসুর নামে অসুরকে ব্রহ্মা বর দিয়ে ফেলেছিলেন যে, কোনও পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না। এরপর সে মনের আনন্দে দেবতাদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করলে ভোগবাদী বৈদিক দেবতারা অবশেষে স্বর্গচ্যুত হন। উত্ত্যক্ত, ব্যতিব্যস্ত দেবতারা দেখলেন, অতিসত্বর এর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। তারা নিজেরা কেউ এই দানবের সঙ্গে লড়তে পারবেন না, তার বদলে প্রবল শক্তিশালিনী এক নারীকে সৃষ্টি করতে হবে। তখন অনেকেই তাদের তেজের অংশ দান করলেন।

শিবের তেজে হল মুখ, বিষ্ণুর তেজে দশটি বাহু, চন্দ্রের তেজে দুই স্তন, ইন্দ্রের তেজে কোমর, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, বসুগণের তেজে আঙুল, কুবেরের তেজে নাক, প্রজাপতির তেজে দাঁত, সন্ধ্যার তেজে দুই ভুরু ও পবনের তেজে দুই কান। এই গঠন প্রক্রিয়ায় বেশ একটা কৌতূহলী দিকও আছে। দেবতারা পরে তাঁদের নিজেদের অস্ত্র এই দেবীকে দান করেন, তাই দেবী একাধিক অস্ত্রে সজ্জিত।

তবে কি সকল দেবতা এই প্রতারক এবং ছলনাময়ী দুর্গা দেবী তৈরীতে কোন আর্য নারীর সাথে পর্যায়ক্রমে যৌন সংশ্রবে মিলিত হয়ে তাকে তেজ প্রদান করেছিলেন, সোজা বাংলায় একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হলে যাকে আমরা পতিতা বা বেশ্যা বলি? দুর্গাপুজার আড়ালে কি এমনই কোন ছলনাময়ী প্রতারক দেবী পতিতারই পুজো করা হচ্ছে? আর অসুরদের দেখা হচ্ছে অত্যাচারী, দেবদ্রোহী, বেদবিরোধী অযাজ্ঞিক অধার্মিক হিসাবে।

শতপথ ব্রাহ্মণ বলছে “যজ্ঞেন বৈ দেবাঃ” যারা যজ্ঞ করতেন তারা দেব। দেবতা কথার অর্থ বিদ্বান ব্যক্তি, বিদ্যাংসো হি দেবাঃ(শতপথ ব্রাহ্মণ), বিদ্বান তিন প্রকার দেব,ঋষি,পিতৃ।

অসুর শব্দের অর্থ বীর, যোদ্ধা, জাজ্বল্যমান। অসুর কোন নিন্দা সূচক শব্দ না ঋগ্বেদে বহুবার প্রশংসা সূচক অভিবাদন স্বরূপ ইন্দ্র, সূর্য, বরুণ কে অসুর সম্ভাষণ করা হয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে যে দেবাসুরের সংগ্রামের কথা পাই, সেটা বাস্তবে শক্তির সঙ্গে প্রজ্ঞার লড়াই ছিল, যেখানে বিদ্বানরা জয় লাভ করে ছিল, আর বীর যোদ্ধা অসুরেরা পরাজিত হয়ে আর্য্যবর্ত ত্যাগ করে পশ্চিমে আ্যসিরিয় সভ্যতা স্থাপন করেছিল। কিন্তু আজ ইতিহাস বিকৃতির ফলে দেবতা বলতে অপার্থিব মহান শক্তি ও অসুর বলতে অদ্ভুত অত্যাচারী কিছু অমানবের প্রতিচ্ছবি বোঝায়।

আসলে দেব বা অসুররা আমাদের মতই রক্তমাংসের মানুষ। এরা দুইদল ভারতেরই দুইটি সুপ্রাচীন আর্য জাতি। তবে একদল যাজ্ঞিক, আর অন্যদল যজ্ঞ রহিত। বেদে ১০৫ বার অসুর শব্দের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ৯০ বারই প্রশংসা সূচক। যেমন অসুরঃ অসু ক্ষেপণে শত্রুণ্ ইত্যসুরঃ। যারা শত্রুদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে পটু তারা অসুর। এবং অসুন্ প্রাণান রাতি দদাতি ইত্যসুরঃ। যারা প্রাণদান করে, যাদের মধ্যে দুর্দমনীয় প্রাণশক্তির প্রকাশ দেখা যায়, সেই সমস্ত শক্তিশালী বীররাই অসুরপদবাচ্য।

ড: নীহার রঞ্জন রায় তাঁর ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস ’ গ্রন্থেও এ কথা স্বীকার করেছেন । বৈদিক যুগে আর্যরা বিহারের মিথিলা পর্যন্ত দখল করলেও শেষ পর্যন্ত তারা পূর্ব-ভারতের আলপাইন মানবগোষ্ঠীর অসুর জাতির কাছে বারবার পরাজিত হয়ে পূর্বভারত দখলের যাবতীয় স্বপ্ন একসময় ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ এই অসুর জাতির যেমন ছিল এক বিশাল হস্তিবাহিনী তেমনি ছিল তাদের শক্তিশালী এক রাজতন্ত্রও। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে(১/১৪) এই অসুর জাতির রাজতন্ত্রের মধ্যে একমাত্র প্রাচ্যদেশেই এই একরাট বা সম্রাট ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। যেহেতু অসুর রাজতন্ত্রের সর্বাধিনায়ককে সম্রাট বলা হত সেহেতু বৌদ্ধ যুগে অসুর জাতির বংশধর হিসাবে সম্ভবত: মৌর্য শাসকদের সর্বাধিনায়কের উপাধিও ছিল সম্রাট। তবে সুচতুর নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণেরা পরাজিত আলপাইন অসুর জাতির লোকদের দেবতার ভয়ে ভীত করে চিরদিনের মত দাবিয়ে রাখতে তাদেরই সৃষ্ট কাল্পনিক দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটিয়ে এই অসুরদের রাজত্ব বঙ্গদেশে ব্যাপকভাবে দুর্গাপূজার প্রচলন করেন; যা ভারতবর্ষের আর কোন রাজ্যে তেমন দেখা যায় না। কাল্পনিক এই দুর্গার আসরে অসুরদের এমন ভাবে তারা অত্যাচারী এবং অশুভ শক্তির ধারক ও বাহকরূপে প্রকাশ করেন যাতে ভবিষ্যতে কোন বাঙালি যেন ঘৃণা ভরে কোনদিনও জানতে না চান যে আসলে তারাই হল আলপাইন অসুর জাতির মানুষ।

এবার ফিরে আসা যাক পতিতা প্রসঙ্গে, পতিতাদের কদর এবং উদাহরন হিন্দু পুরাণে ভুঁড়ি-ভুঁড়ি! তাছাড়া হিন্দু পুরাণে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতা বা বৈদিক বিদ্বান নেতাদের থেকেও বেশী। কালীদাস রচিত শকুন্তলায় আছে- বিশ্বামিত্র ঋষি ইন্দ্রত্ব লাভের আশায় তপস্যা করছিল। তখন ইন্দ্র ভীত হয়ে মেনকাকে পাঠায় বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য। মেনকা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে বিশ্বামিত্রের সামনে যায়, ফলে বিশ্বামিত্র তপস্যা ভুলে মেনকার সাথে যৌন-সংশ্রবে মিলিত হয়। এই মিলনের ফলে শকুন্তলার জন্ম হয়। দেবরাজ ইন্দ্র সর্বশক্তিমান হয়েও যা করতে পারলেন না, মেনকা সামান্য নারী হয়ে তা অবলীলায় করে ফেলল!

তেমনি এই দুর্গা চরিত্র, নোংরা ছলনার দ্বারা বীর মহিষাসুরকে নিরস্ত্র করে হত্যা করে। ঋগবেদের ১.১০৮.৮ শ্লোক অনুযায়ী জানা যায়, আর্য গোষ্ঠী গুলির মধ্যে পাঁচটি মূল গোষ্ঠীর, যেমন-পুরু, যদু, তরবাসা, অনু এবং দ্রুহয়ু- এর সঙ্গে অনার্য বীর রাজা মহিষাসুরের বারবার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে এই আর্য গোষ্ঠী গুলি বেশ কয়েকবার পরাজিত হলে তারা একত্রে বসে পরামর্শ করে নৃত্য -গীতে পারদর্শী সুন্দরি কামিনী-নারী দুর্গাকে মহিষাসুরের কাছে পাঠায়। অসুরজাতি নারীকে আক্রমণ করত না। রাজা মহিষাসুর যখন অস্ত্র ত্যাগ করে শয়ন কক্ষে যান, ঠিক তখন-ই নিভৃত ঘরে ছলনাময়ী-কামিনী দুর্গা তাকে হত্যা করে আর্যদের বিজয় গাঁথা রচনা করে। ছলনাময়ী নারী দুর্গা অসুরদের বীরসম্রাট মহিষাসুরের বুকে ত্রিশূল দিয়ে বিঁধে, বুকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর তার অনুগত অন্যান্য হিংস্র পশুরা তাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। ব্রাহ্মন্যবাদী সংস্কৃতি বৈদিক বামুনেরা দলিত ও অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেনীর মানুষের উপর ছলে-বলে-কলে-কৌশলে চাপিয়ে দিয়েছে এবং মূলনিবাসীদের সংস্কৃতিকে নৃশংসভাবে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে অনেকেই নিজেদের উৎস ও অতীত ইতিহাস ভুলে গিয়ে আজ বৈদিক বেশ্যা দুর্গাকে মাতৃজ্ঞানে বন্দনা করেন।

অথচ হিন্দু সমাজেও এই বেশ্যাদের বেশ কদর ছিলো বরাবরই। কারণ ঐ যে, দেবতাদের চেয়েও পতিতার শক্তি বেশী। উল্লেখ্য ব্রিটিশ আমলে পতিতাদের জন্য এই কলকাতা শহর কিন্তু ছিল খুব বিখ্যাত। ব্রিটিশদের হস্তগত করতে পতিতার প্রলোভন দেয়া হয়, তাই বাংলায় পুনরায় পতিতাদেবী দুর্গা পুজোর প্রচলন শুরু হয় এই ব্রিটিশ আমলেই। বহিরাগত মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে কোনক্রমে পেরে না ওঠা অবস্থাপন্ন হিন্দু জমিদারগণ অবশেষে পতিতাদেবীর পুজোর আয়োজন অন্তত তাই প্রমাণ করে। বিখ্যাত(!) পতিতালয় সোনাগাছি-তো এই শহর কলকাতাতেই অবস্থিত। এ সম্পর্কে ইতিহাস বলে-
"কলকাতায় খুবই রমরমা ছিল বেশ্যাদের জগৎ। গৃহস্থের বাড়ির পাশে বেশ্যা, ছেলেদের পাঠশালার পাশে বেশ্যা, চিকিৎসালয়ের পাশে বেশ্যা, মন্দিরের পাশে বেশ্যা"। [তথ্যসুত্র: বিনয় ঘোষ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত,১৯৯৯, পৃ. ৩০২-০৩]

ইসলাম ধর্ম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ অসম্মান

ইসলামী পর্দার বিধান
মুসলমানরা একটি কথা বরাবরই বলেন যে, একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীদেরকে দিয়েছে  মানবাধিকার এবং উচ্চ মর্যাদা যা অন্য কোনো ধর্মে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আসলেই কি তাই? নাকি তাঁর সম্পূর্ণ বিপরীত? ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে কি ধরনের অধিকার দিয়েছে, ইসলামের চোখে নাড়ি কেমন, তাদের কাজ কি ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন প্রথমে কুরআন খুলে সুরা বাকারার ২২৩ নাম্বার আয়াতে একটু চোখ বুলাই।

তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। তাই তোমাদের শস্যক্ষেতে যাও, যেভাবে তোমরা চাও। নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা করো। আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান! জেনে রেখো তোমরা তাঁর সামনা সামনি হতে যাচ্ছো। আর যারা পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে গেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও। [আল-বাক্বারাহ ২২৩]


“তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। কত বড় অপমানকর কথা! ইসলাম নারীদেরকে মানুষ মনে করে না, চাষের জমি মনে করে? তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো। নারীরা কি পুরুষদের সম্পত্তি যে, যখন যা খুশি করবে? এই হচ্ছে ইসলামে নারীর সম্মান? ইসলাম না বড় গলায় বলে যে, এটা নারীদের অধিকার দিয়েছে? এই হচ্ছে তার নমুনা? ইসলামে নারী হচ্ছে স্বামীর শস্যক্ষেত্র। কিন্তু নারী কেনো শস্যক্ষেত হতে যাবে? তারা কেনো পুরুষের দাসী হয়ে জন্মাবে?

রাসুল (সাঃ) বলেছেন- “পুরুষেরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর বা সুগন্ধি মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করে তাহলে সে একজন যিনাকারী মহিলা হিসাবে গণ্য হবে” (আহমাদ ৪/৪১৮, ছহীহুল জামে হাদীছ ১০৫)

ভেবে দেখুন, পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতে সব জাইগায় নারীদের অবদান। বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়। মিশতে হয় নানা-ধরনের মানুষের সাথে। এঅবস্থায় যদি তাদের শরীর দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টি কেমন হবে? প্রিয় নবী মোহাম্মাদ কি এটাই চেয়েছিলেন? সমাজে নারীকে হেই করা হোক। তাদের ঘরে বসিয়ে রাখা হোক। তাহলে নারীকে সমান অধিকার কিভাবে দিলো ইসলাম? আর সর্বোচ্চ সম্মানই বা দিলো কিভাবে? এটা কি তাদের শুধু গলাবাজি নয়?

প্রথমেই বলে নেই ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মোহাম্মাদ ছিলেন একজন পুরুষতন্ত্রবাদী। (পুরুষতন্ত্রবাদ জিনিসটা কি তা আমি এই লেখায় উল্লেখ করছিনা অবশ্য)। তবে কোরআন ও বিভিন্ন হাদিস থেকে সুস্পষ্ট ভাবে জানা যায়, তিনি দশাধিক  বিয়ে করেছিলেন। বয়স ২৫ বছর থাকাকালীন মোহাম্মাদ তার নিজের চেয়ে ১৫ বছরের বড় এক নারীকে (খাদিজা) বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে মোহাম্মাদের অনেক অনুসারীরা যুক্তি দেখান যে, তাদের প্রিয় নবী একজন ভালো এবং উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি একজন বয়স্কা নারীকে বিয়ে করে উদার মনের পরিচয় দিয়েছিলেন।

সত্যি কি তাই? খাদিজাকে বিয়ে করে মোহাম্মাদ মোটেও উদারতার পরিচয় দেননি। তাকে খাদিজার পছন্দ হয়েছিলো আর খাদিজা মোহাম্মাদকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মোহাম্মাদ রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। মোহাম্মাদ নিজেকে নবী দাবী করার পর খাদিজা তার কথা বিশ্বাস করে মোহাম্মাদের সেই ‘কল্পিত ঈশ্বরের’ (আল্লাহর) ধর্ম কবুল করেন। মোহাম্মাদের জীবনে ইনি ছিলেন প্রথম নারী যিনি মোহাম্মাদকে ভালোবেসে তার বানানো পুরুষতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করেছিলেন। মোহাম্মাদ এরপর যতগুলো বিয়ে করেন সবগুলোর ক্ষেত্রেই উনি নিজের বানানো মতবাদ তার সঙ্গিনীর উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন।
অথচ তিনি একবারও নারীদের বাইরে ঘোরাফেরা করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেননি, যেটা ইসলাম ধর্ম আসার আগেও আরব সমাজে মোটামুটি ছিলো। এবং এটা পুরোপুরি খর্ব করে তাদের উপর আপাদমস্তক পর্দা চালু করে দেন। কিন্তু এই বোরখা-হিজাব আসলে আরবীয় বা মরুভুমির পোষাক। যা অন্যান্য দেশের পরিবেশ-আবহাওয়া এবং কালচারের সাথে যায় না। এ ধরনের পোষাকগুলো বালুঝড়, লু হাওয়া বা তীব্র রোদ থেকে বাচার জন্য আরবীয় দেশ গুলোতে পরা হতো। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতে, ইসলাম তো পুরো পৃথিবীর জন্য। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীর সকল দেশে একই আবহাওয়া অথবা ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন পোষাকের নিয়ম করে দেওয়া কি উচিৎ ছিলোনা?

"হে নবীপত্নীগণ,... তোমরা নিজের গৃহে থাকবে; প্রাচীন যুগের মত নিজেদের  প্রদর্শন করে বেড়িও না।" (সূরা আহজাব এর ৩৩নং আয়াত)

উপরের আয়াত থেকে বোঝা যায়, আরব সমাজে ইসলামের আগে নারীদের যে অধিকার ও স্বাধীনতা ছিলো। যা ইসলাম আসার পরে হরণ করা হয়। নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা একই বিষয়ের কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

"বিবি আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেনঃ নারীগণ তখন যে ধরণের চালচলন এখতিয়ার করিয়াছে তাহা  যদি  রসুল (সঃ) দেখিতেন, তবে নিশ্চয় তাহাদিগকে বাইরে বাহির হইতে বাঁধা  দিতেন।" (বোখারী)

সূরা নূর এর ৩১ নম্বর আয়াত দেখা যাকঃ

"আর মুমিন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর তারা যেন স্বীয় সাজসৌন্দর্য না দেখায়, তবে যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় । তা ছাড়া তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে। এবং তারা কারো সামনে তাদের সাজসৌন্দর্য প্রকাশ করবে না এই মাহরাম আত্মীয়গণ ব্যতীত যথা স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, ভ্রাতা ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত, বাঁদী, নারীর প্রতি স্পৃহাহীন সেবক, ওই সব বালক যারা নারীর গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়নি। তারা যেন পথচলার সময় এমন পদধ্বনি না করে যাতে তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য পদধ্বনিতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম হও।"

নারী হাটতে গেলে পায়ে শব্দ করতে পারবে না, সুগন্ধি মাখতে পারবে না এবং করকশ কন্ঠে কথা বলতে হবে। এ ধরনের বর্বর নিয়ম মেনে চলা কোনো মেয়ের পক্ষেই অসম্ভব ব্যাপার। ইসলাম ধর্মে নারী হচ্ছে গোপন এবং একটা নিষিদ্ধ 'জিনিস'। হ্যাঁ, জিনিসই। ইসলাম নারীকে মানুষ নয় শুধুই একটা জিনিস মনে করে। যেখানে নারীরা ইসলাম ধর্মে শুধুই  একটা 'যৌনবস্তু' এবং শুধুই স্বামীর যৌনখাবার সেখানে তাদের মর্যাদা এবং মানবাধিকার দেওয়া হয়েছে এই ধরণের কথা মুমিন ধার্মিকরা এত উচু গলায় করে বলে কিভাবে, সেটাই বোধোদয় হয় না।  ইসলাম ধর্মে নারীদের কেমন চোখে দেখা হয়, শুনুন হুজুরের মুখ থেকে।


নারীর জন্ম হচ্ছে কলঙ্ক। নারীর জন্ম হয়েছে পুরুষের সেবা করার জন্য। নারী হচ্ছে বাড়ির আসবাবপত্রের মতই একটি সম্পদ। চাইলে বিক্রি করাও যাবে? নারীর হাত হারাম, পা হারাম, শুধু সেক্স আরাম, তাই তো? আর এটাই হচ্ছে ইসলাম হতে প্রাপ্ত নারীর সর্বোচ্চ সম্মান।

ইসলাম মনে করে, নারীদের আবৃত করে না রাখলে পুরুষরা তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়বে। পুরুষরা হিংস্র এবং নারী হলো ভোগ্য বস্তু। কিন্তু তাদের এই মতবাদ শুধু নারীকেই ছোট করে না বরং সকল পুরুষদেরও চরম অপমান করা হয়।

‘হে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)! স্ত্রীগণকে বলে দিন যে তারা যেন চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়, এতে তাদের চেনা সহজতর হবে ফলে তাদের কেউ উত্ত্যক্ত করবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা আহজাবঃ আয়াত-৫৯)

তাহলে নারীদের পোষাকের কারনেই পুরুষরা উত্যাক্ত বা ধর্ষণ করে? বিভিন্ন উন্নত সভ্য দেশে (আমেরিকা, ফ্রান্স বা অস্ট্রেলিয়া) নারীরা শার্ট-প্যান্ট পরে, স্কার্ট পরেন, ন্যুড বীচে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কই তাদের তো কেউ ধর্ষণ করেনা! হ্যা তবে ধর্ষণ হয়। কিছু অসুস্থ মানুষিকতার মানুষই ধর্ষণ করে, যারা নারীকে বন্ধুসুলভ না হয়ে ভোগ্য পন্য বা বস্তু মনে করে। অবৈজ্ঞানিক ও যুক্তিহীন ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো মাথা ব্যাথা হলে ওষুধ না খেয়ে মাথা কেটে ফেলা।

মোহাম্মাদের নীতি অনুযায়ী নারীদেরকে তাদের মুখমণ্ডলসহ শরীর ঢাকতেই হবে কারণ তা
না হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। একে কি মানবাধিকার বলে নাকি 'নারী-অবমাননা' বা 'নারীদেরকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা' বলে? (বোরকা বা পর্দা প্রথা একধরণের কারাগারের মত নয়?)

পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষই স্বাধীন। কাউকে আঘাত বা ক্ষতি না করে যে কোনো কাজ করার অধিকার একটা মানুষের থাকা উচিৎ। কিন্তু ইসলাম কি নারীদের তা দিয়েছে?

"যদি আমি অন্য কাউকে সিজদা করতে আদেশ দিতাম তাহলে নারীদেরই বলতাম তাদের  
স্বামীদের সিজদা করতে।" - মিশকাত

এ হাদিসের মাধ্যমে বোঝানো হয় পুরুষ হচ্ছে নারীদের দ্বিতীয় ঈশ্বর (যদি দুই ঈশ্বরের রীতি থাকতো)। তাঁর মানে, বিবাহিত নারীরা হচ্ছে পুরুষের দাসীর মত। তারা যা আদেশ করবে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে এবং অবাধ্য হলে কঠিন শাস্তি। এমনকি স্ত্রী স্বামীর কথা অমান্য করলে মার-ধোর দেওয়ার বিধানও রয়েছে ইসলামে। যা একেবারেই মানবতা বিরোধী।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নারী গোপন বস্তু সে পর্দার থেকে বের হলে তার উপর শয়তান তাকাতে থাকে। (অর্থাৎ মানুষদেরকে তার দিকে তাকানোর জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করে)। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস৩৪ নং-১১৭০)

ইসলামের এসমস্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা নারীদের অসম অধিকার প্রমাণিত হওয়ায়, আধুনিক ইসলামিক স্কলাররা ব্যাখ্যা ঘুরানোর পায়তারা শুরু করেছে। মোহাম্মাদের অনুসারীরা দাবী করেন, নারীকে শস্যক্ষেত্র বলা হয়েছে রূপক অর্থে। তাহলে রূপকটা এত ঋণাত্মক হলো কেন? কেন নারীদের নিজস্ব স্বকীয়তা পুরোপুরি বাদ দিয়ে তাদেরকে শুধুই স্বামীর যৌনখাদ্য এবং সন্তানসৃষ্টির যন্ত্র  হিসেবে রূপক বলা হলো? আসল কথা হলো পুরুষ নবীর অজ্ঞতা এবং নিজের ফয়দা উঠানোর জন্য নারীদের দমিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।

নারীদেরকে দূর্বল মনে করা পুরুষতন্ত্রবাদী ইসলামে, নারীদেরকে বাইরের সকল কাজ করতে নিষেধ। ইসলামী মতে তারা শুধু রান্না-বান্না, স্বামীর সেবা, আর রাত হলে স্বামীর শস্যখেত হয়ে যাবে। এটাই নারীদের সম্মান! এটাই সমঅধিকার। আর এ কারনে কারনে আমাদের দেশ সহ অধিকাংশ মুসলিম দেশেই নারীরা অনেক পিছিয়ে। অথচ উন্নত সভ্য দেশগুলোতে নারীরা বাইরে  স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করা সহ সামরিক বাহিনীতেও সৈনিক পদে কাজ করছে। আর মুসলমানরা দূর থেকে দেখে নাক সিটকায়। এতেও পুরুষদের যৌন উত্তেজনা উঠে যাওয়ার অজুহাত খাড়া করে।

নারীকে ঘিরে ইসলামের এসব বর্বরতাই প্রমাণ করে ইসলাম ধর্ম নারীকে দিয়েছে নারীকে সর্বোচ্চ অসম্মান।

লেখক – তুষার শামস জুয়েল

ইবলিস শয়তান সম্পর্কিত কিছু চমকপ্রদ তথ্য, যা শুনলে আপনি থ হয়ে যেতে পারেন

শিল্পীর কল্পনায় ইবলিশ শয়তান
লেখক - মোমিন শেখ
ইসলাম ধর্মে ইবলিশ নামটি খুবই পরিচিত একটি নাম। মুসলিম-অমুসলিম প্রায় সকলেই ইবলিশ শয়তানের নাম শুনেছে। ইবলিশ সম্পর্কে জানেনা এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। তবে আজকে ইবলিশ সম্পর্কে একটু নিরেপক্ষ এঙ্গেল থেকে জানবো।

১। ইবলিসের পিতার নাম খবিস। খবিস ছিলেন বাদশা হামুসের পুত্র। তার আকৃতি ও স্বভাব ছিলো সিংহের ন্যায়। এবং ইবলিশের মায়ের নাম নিলবিস। নিবলিশও বাদশা হামুসের কন্যা। তার স্বভাব ছিলো নেকড়ের ন্যায় ভয়ংকর। একটি বর্ণনায় আছে, জাহান্নামের আগুনের ভেতর খবিশ ও নিবলিশের যৌনমিলনের ফলে ইবলিশের জন্ম হয়। কিন্তু কি কারনে তারা জাহান্নামে ছিলো সে কারন অজ্ঞাত।

২। জিন জাতিদের ধ্বংসের সময় ফেরেস্তারা যখন ইবলিসকে আসমানে নিয়ে যায় তখন ইবলিসের বয়স ছিল এক হাজার বছর। নিজের ইবাদত শেষে তিনি ফেরেস্তাদের উদ্যেশে ওয়াজ-নসিয়ত ও করতেন। ফেরেস্তারা তা শুনে মুগ্ধ হয়।

৩। ইবলিস ছিল সমস্ত ফেরেস্তাদের ওস্তাদ বা দলনেতা। ফেরেস্তারা জীন জাতিকে হত্যার পরও পৃথিবীতে বনে জঙ্গলে কিছু জীন থেকে গিয়েছিলো। তাদের বংশবৃদ্ধির পর আল্লাহ ইবলিশকে তাদের নবী হিসেবে প্রেরণ করে। কিন্তু কোনো জীন তাকে চ্যাটের দাম দেয় নি। অর্থাৎ তার কথা কেউ শোনেনি। :D

৪। ইবলিস নিঃসন্দেহে আল্লাহর চেয়েও জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। অনেক ফেরেস্তা ও ইবলিস আল্লাহকে মানুষ বানাতে নিষেধ করেছিল, সাবধান করেছিল। আল্লাহ সেটা না শুনে মানুষ বানিয়ে চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়েছিল। আল্লাহ তখন রাগ করে ইবলিস আর আদম হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

৫। ইবলিস ছিল জিন জাতির শেষ নবী। জিনদের দুর্ভাগ্য, তারা তাদের শেষ নবীকে পাত্তাই দেয়নি। তখন তাদের ধ্বংস করা হয়। তবে যারা ঝোপ-ঝাড়ে মশা-মাছির মত লুকিয়ে ছিলো তারা বংশবৃদ্ধি করে ফেলে। আর এ কারনেই ২০১৮ সালে এসে আমাদের জিনের ঝামেলা পোহাতে হয়। কারো ঘাড়ে লাগে, কাউকে আবার রেপও করে।

৬। ইবলিস একাধারে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আল্লাহর ইবাদত করেছিল। কিন্তু বিনিময়ে সে আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছে "শয়তান" নামক নিকৃষ্ট উপাধি।

৭। আল্লাহর একটি হুকুম অমান্য করার কারনে ইবলিস চির অভিশপ্ত শয়তান হয়ে যায়। অথচ, ইবলিশ একমাত্র ফেরেশতা যে আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা না করার শপথ করেছিল, এবং তার শপথ পালন করেছিল।

৮। ইবলিস মানুষের শিরা উপশিরায় প্রবেশ করে ধোঁকা দিতে পারে। এমনকি সে বান্দাদের নাকের ভেতরও অবস্থান করে। তখন আল্লাহ বা তার ফেরেস্তারাও কিছু করতে পারে না।

৯। ইবলিসের বুদ্ধি অবশ্যই আল্লাহর চেয়েও বেশী। বেহেস্ত থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পরও সে আল্লাহর চোখকে ফাঁকি দিয়ে আদম হাওয়াকে গন্দম ফল খাওয়াতে পেরেছিল। তাছাড়া পৃথিবীর ৯৯ ভাগ মানুষ তার অনুসারী। বাকি মানুষ আল্লাহর অনুসারী। কি বুঝলেন?

১০। ইবলিস বিয়েসাদি করে নাই। চিরকুমার। তার কোন পরিবার সন্তানাদি নাই। তবে সে ব্যাচেলারদের যৌন যন্ত্রনা ভালোই উপলব্ধি করে। কারণ মানুষ রেপ তো ইবলিশের ধোকায় পড়েই করে। প্রমাণঃ- কিছুদিন আগে একজন ঈমাম সাহেব ছোট্ট বাচ্চাকে রেপ করে বলেছে শয়তানের ধোকায় এ কাজ করেছি।


১১। আল্লাহ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী, রসুল পাঠিয়েও মানুষকে তার কথামত চালাতে পারেননি। এখনো পৃথিবীর ৯৯% মানুষ সঠিকভাবে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলেনা। সবাই শয়তানের কুমন্ত্রনায় চলে। কারন, মানুষ বুঝতেই পারেনা, কোনটা সহী এবং আসল সরল সোজা পথ।

১২। পৃথিবীতে ইবলিসের রাজত্ব চলে। তার বুদ্ধিতেই পৃথিবীর সব খারাপ কাজ হয়। কিন্তু সবকিছু জেনেও আল্লাহ নিরব ভুমিকা পালন করে চলেছে। এসব নাটক বাদ দিয়ে সুস্থ মস্তিস্কে অন্য কিছু ভাবা উচিৎ ছিলো।

১৩। মুসলিমদের আল্লাহর উপর ভরশা সবচেয়ে কম। এরা আল্লাহর কাছে বিচার না চেয়ে ইবলিসের অনুপ্রেরণায় নানারকম কাজ করে, ইহুদী নাসারাদের কাছে রিপোর্ট করে।

১৪। ইবলিস কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবে। তাকে কেউ, এমনকি আল্লাহও মারতে পারবে না।

সূত্রঃ আল কোরআন, সহী হাদিস এবং তাফসির।

ফেরাউনের লাশ এর আসল রহস্য - অলৌকিক নাকি উপকথা?

ফেরাউন বা দ্বিতীয় রামিসেস
লেখক - মোমিন শেখ
ইসলাম যে মিথ্যা একটি ধর্ম এবং কোরআন যে স্বঘোষিত নবী মোহাম্মাদের তৈরি গল্পের বই, তা প্রমানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে ফেরাউন নিয়ে সুরার আয়াত, যা ধর্মান্ধদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে ফেরাউন এর লাশের মুখরোচক গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। যা শুনলেই মনে হবে ইসলাম আসলেই একটা অলৌকিক ধর্ম। ফেরাউন সম্পর্কে কোরআনের ২৭ টি সুরায় ৭৫টি স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

"বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী, অত:পর তাদের পশ্চাদ্ভাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্ধেশ্যে, এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করলো, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া যার ইবাদত করে বনী ইসরাঈলরা। অতএব আজকের দিনে রক্ষা করছি আমি তোমার দেহকে যাতে তা তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নি:শন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।" (সূরা ইউনুস:৯২)। 


কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে, ফেরাউন নবী মুসাকে ধাওয়া করলে, এক সাগরের তীরে আসে। মুসার লাঠির আঘাতে সাগর শুকিয়ে রাস্তা হয়ে যায়, এবং তারা পার হয়ে ওপারে চলে যায়। ফেরাউন সেই রাস্তা দিয়ে পার হওয়ার সময় ডুবে মারা যায়। এবং আল্লাহ মানবজাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখানোর জন্য নিদর্শন হিসেবে ফেরাউনের লাশকে অক্ষত অবস্থায় রেখে দেয়, যা থাকবে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত। পরে সাগর থেকে উদ্ধার করে জাদুঘরে রাখা হয়।

বড় বড় নামের টাইটেলওয়ালা হুজুরদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে আরও জানা যায়, ১৯৮১ সালে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া মিতেরা মমি করে রাখা ফেরাউনের লাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার জন্য তা ফ্রান্সে পাঠাতে মিশর সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। ফেরাউনের লাশ সংক্রান্ত গবেষক টিমের প্রধান ছিলেন মরিস বুকাইলি। ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণ অন্য গবেষকদের উদ্দেশ্য হলেও বুকাইলি নিজে ফেরাউনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে উদগ্রীব ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা গবেষণার পর ফেরাউনের লাশে লবণের কিছু অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়।  ফলে স্পষ্ট হয় যে সাগরে ডুবেই ফেরাউনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার লাশ সাগর থেকে উঠিয়ে এনে মমি করা হয়। এবং সাথে সাথেই মরিস বুইকালি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

তাহলে এটাই কি আসল ঘটনা? মোটেই না। চলুন ফেরাউনের মমির আসল ঘটনা জেনে আসি। তবে তার আগে মরিস বুকাইলি সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক।

মরিস বুকাইলি ছিলেন একজন ফরাসি চিকিৎসক। ১৯৭৩ সালে, তিনি সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পরিবারের চিকিত্সক নিযুক্ত হন.একই সাথে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের পরিবারের সদস্যরা তার রোগী ছিল। মরিস বুকাইলি ইসলামের একজন একনিষ্ঠ গবেষক ছিলেন, তবে তিনি কখনো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই। - সুত্র উইকিপিডিয়া

মরিস বুইকালির নামে অভিযোগ আছে তিনি সৌদি আরব সরকারের টাকা খেয়ে একটা বই লিখেছিলেন ইসলাম সম্পর্কে। পরে সেই বই এর কড়া সমালোচনায় অন্য একটি বই বের করা হয়। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে লাশ নিয়ে গবেষনা কতটা নিখুত ছিলো। ফেরাউনের লাশে লবন পাওয়া গিয়েছিলো বলেই যে সেটা সমুদ্রে থাকবে এমন কোনো কথা নাই। প্রাচীনকালে লাশ মমি করতে হলে লবনের দ্রবনে ডুবাতে হতো।

এবার আসি আসল কথায়। 

ফেরাউন কার নাম?
ফেরাউন (Pharaoh) কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়। প্রাচীন মিশরীয় রাজাদের উপাধি ছিল ফারাও। আরবরা বলতো ফেরাউন। শুধু পুরুষ রাজা নয়, ফেরাউন শব্দটা মহিলা শাসকদের হ্মেত্রেও ব্যবহার করা হত। মিশরে ৩৩২ জন রাজা রাজত্ব করেছিলেন, তাদের সবাইকেই ফারাও/ফারাউন বলা হতো। কোরআনে কোনো নির্দিষ্ট ফিরাউনের নাম উল্লেখ করা হয়নি বরং উক্ত কাহিনীতে শুধুমাত্র ফেরাউন উল্লেখ করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অজ্ঞতা। আপনি শুধুমাত্র রাজা/প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী বলতে কাকে বুঝবেন?

ফেরাউনের লাশ কি সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়?
মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী, ফেরাউনের লাশ লোহিত সাগরের তলদেশ থেকে আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি একটি বড় রকমের মিথ্যাচার। নদী/সাগরের তলদেশ থেকে কোনো মমিই উদ্ধার করা হয়নি। ১৮৮১ সালে যেই মমিটি পাওয়া যায়, সেই মমিটি দ্বিতীয় রামিসেসের। তাঁর মমি উদ্ধার করা হয়েছে DB320 নামে একটা সমাধিতে। সেখানে দ্বিতীয় রামিসেস ছাড়াও আরও ৫০ টি মমি উদ্ধার করা হয় একই সাথে। তবে, দ্বিতীয় রামিসেসকে প্রথমে KV7 নামে একটা সমাধিতে রাখা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে Pinudjem II এর মমির পাশে DB320 এ স্থানান্তর করা হয়।

ফেরাউন বলে যাকে দাবি করা হচ্ছে, তার পরিচয় কি?
দ্বিতীয় রামিসেস নামের এই ফেরাউনের জন্ম (প্রায়) খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩; মৃত্যু জুলাই বা আগস্ট ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব; শাসনকাল হচ্ছে, ১২৭৯–১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব। তাকে রামিসেস দ্য গ্রেট বা মহান রামিসেস বলা হতো। তিনি ছিলেন মিশরের উনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা। যারা বলে থাকে তার লাশ সাগর থেকে তোলা হয়েছে, হয় তাঁর মিথ্যা বলে বা তারা আসলেই জানেই না আসল ঘটনা। রামেসিস ২ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

ফেরাউন কি সাগরের পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিলো?
ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী, ফেরাউন নবী মুসাকে ধাওয়া করতে গিয়ে সাগরের পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অথচ ফিরাউন বা দ্বিতীয় রামিসেস মৃত্যুবরণ করেছেন আর্থ্রাইটিস নামক এক রোগে। এটি প্রায়ই বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের হতে দেখা যায়। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, দ্বিতীয় রেমেসিস সাগরে ডুবে মরেননি। ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মাদ ওই সময় আবছা আবছা যা শুনেছিলো তাই ভুল করে কুরআনে লিখে রেখেছিলেন।

কোরআনে তো মুসা নবীর সাগর ভাগ করা আর ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার ঘটনা আছে। কিন্তু মোহাম্মাদ এত বছর আগে ফেরাউনের লাশের ভবিষ্যৎবাণী করলো কিভাবে?
ফেরাউন আর মুসাকে নিয়ে বানানো গল্প শুধু কুরআনে না, বরং পূর্বের কয়েকটি প্রধান ধর্মগ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে অনেক আগেই, যা ছিলো বিভিন্ন জায়গার আঞ্চলিক উপকথা মাত্র। মোহাম্মাদ হিব্রু বাইবেল থেকে সরাসরি কপি-পেস্ট করে কুরআনে ঢুকিয়েছে। এবং খাদিজার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। আর নবী মুহাম্মদের সময়কালে প্রাচীন মিশরীয় মমির কথা সকলেরই জানা ছিল। তাই ফেরাউনরা মৃত্যুর পর তাদের লাশ সংরক্ষণ করে রাখে মমি করে, এটা ইসলামের নির্মাতা মুহাম্মদ অবশ্যই শুনেছেন। তাই, কোরআনে ঐ সাগর দুই ভাগ হওয়ার কিচ্ছা ও লাশ সংরক্ষনের ঘটনা জুড়ে দেয়া নিশ্চয়ই কোনো মোজেজা নয়। কুরান ও বাইবেল লিখিত হওয়ার হাজার বছর আগেই যা ঘটে গেছে, সেই জানা ঘটনার উল্লেখ থাকা কোনো কৃতিত্বের কাজ নয়।

তাহলে ফেরাউনের লাশ এতো বছর ধরে এখনও অক্ষত থাকে কিভাবে?
নবী মোহাম্মাদ রচিত কোরআনে মাত্র একজন মানুষের লাশ অক্ষত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি মিশরের যাদুঘরগুলোতে যান, দেখবেন হাজার হাজার লাশ অক্ষত আছে এখনও। মিশর ছাড়াও আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া অঞ্চলের আরও প্রায় ২০-২৫ টি দেশে বহু মমি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, ঐ মমিগুলো কে সংরক্ষণ করেছে ভবিষ্যৎ নিদর্শন হিসেবে? চলুন দেখি কিভাবে মমি গুলো কিভাবে সংরক্ষন করা হতো।



প্রাচীন মিশরীয়রা ছিলো অত্যান্ত বুদ্ধিমান। তারা আধুনিক সভ্যতায় অনেক অবদান রাখে। মমি তৈরি করার জন্য তারা প্রথমে লাশের পেট কেটে শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অঙ্গ যেমন - ফুসফুস, বৃক্ক, পাকস্থলি ইত্যাদি বের করে আনতো। এসব অঙ্গ বের করার পর আবার পেট সেলাই করে দেয়া হতো। মগজ অর্ধতরল করে ফেলতো ও লোহার হুক দিয়ে টেনে বের করে আনতো। তারপর ন্যাট্রন লবণ সহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক লবণের দ্রবণে মাস তিনেক ডুবিয়ে রেখে তুলে আনা হতো। এরপর রোদে শুকানোর পালা। পরিপূর্ণভাবে লাশটা শুকিয়ে গেলে এটাকে ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী করে তৈরি করা এক ধরনের ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে ফেলা হতো। অবশেষে কাঠের বাক্সে প্যাকিং!

সুতরাং বোঝাই যায়, ইসলাম এবং কোরআন কতটা অলৌকিক। পুরোনো গল্প/উপকথা নতুন করে সাজিয়ে প্যাকিং করে বাজারজাত করার অর্থই হচ্ছে ইসলাম। আর বোকা মানুষদের মগজধোলাই করার জন্য শানে নুজুল তো আছেই।

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো - বিস্ময়কর রহস্যের গিট খুলছে

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি
লেখক - মোমিন শেখ
রাতের মেঘমুক্ত আকাশে তাকেলে সাদা মেঘের মত একটা অস্পষ্ট ঝাপসা দাগ দেখা যায় যা উত্তর থেকে দক্ষিন দিকে চলে গিয়েছে। এর নাম ছায়াপথ। আমরা এই ছায়াপথের ভেতরে বাস করি। এর ইংরেজি নাম Milkyway Galaxy এবং বাংলায় আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বলা হয়।  আমাদের সূর্য-গ্রহ-উপগ্রহ এই ছায়াপথের ভেতর অবস্থান করছে। কিন্তু আমাদের অবস্থান এবং দৃষ্টিশক্তির চেয়ে বিশাল হওয়ায় সম্পূর্ণ ছায়াপথটি আমরা দেখতে পাইনা। এটি দেখতে অনেকটা মশার কয়েলের মত।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরি করার জন্য ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা(ইসার) ২০১৪ সালে ৯ ই জানুয়ারি উৎক্ষেপণ করে ”গায়া” টেলিস্কোপসহ একটি রকেট। এটির অবস্থান করছে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কি.মি। এই টেলিস্কোপটির সাথে সেট করে দেওয়া হয়েছে অত্যান্ত শক্তিশালী একটি ক্যামেরা। যার ক্ষমতা ১০০ কোটি পিক্সেল!

এই টেলিস্কোপটির তৈরি করার মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ত্রিমাত্রিক (3D) ম্যাপ তৈরি করা। এজন্য এই টেলিস্কোপটির নকশা করা হয় যেন খুব সহজে এটি মহাকাশে ছবি তুলতে পারে। একই সাথে এটি গ্রহ, ধুমকেতু, গ্রহাণুর একটি ত্রিমাত্রিক তালিকা তৈরি করবে। এছাড়াও এটি বৃহস্পতি আকৃতির ১০ হাজার বহিগ্রহ, ৫ লক্ষ কোয়াসার এবং সৌরজগতের ১০ হাজার গ্রহাণু শনাক্ত করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন ইসার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
.
এই অভিজানটির প্রধান বিজ্ঞানী মার্ক ম্যাককফরেন বলেছেন,  "এই অভিযানটি দিয়ে আমরা সহজেই গ্যালাক্সির রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। এর মাধ্যমে ১০০ কোটি নক্ষত্রের অবস্থান নির্ভুলভাবে ম্যাপ আকারে তৈরি করা যাবে। শুধু তাই নয়,তারা কিভাবে ঘুরছে বা কি গতিতে ঘুরছে,তাও জানা যাবে। এর মধ্যে দিয়ে আমররা গ্যালাক্সির ডকুমেন্টরি তৈরি করে ফেলতে পারব। ভবিষ্যতে কি হবে তা জানার জন্য ত্রিমাত্রিক ম্যাপটিকে আমরা সামনের দিকে চালাতে পারব। যেহেতু এই তারাগুলো কিভাবে চলছে তা আমাদের জানা হয়ে যাবে। সুতরাং, এটাকে আমরা আবার পেছনে দিকেও চালাতে পারবো। ফলে দেখতে পারবো যে কিভাবে এই ছায়াপথের জন্ম হলো।"
তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ডকুমেন্টরি তৈরির মাধ্যমে যদি তারাদের ভবিষ্যৎ অবস্থান সনাক্ত করা যায়, তাহলে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে  কীভাবে ছায়াপথের জন্ম হলো, তা জানার আমাদের পক্ষে খুবই সহজ হয়ে যাবে।

ইসার এই অভিযানের মাধ্যমে ১ বিলিয়ন নক্ষত্রের দিয়ে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির নিখুঁত ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরি করার কথা থাকলেও এ বছরের ২৫ শে এপ্রিল ইসার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল ১.৭ বিলিয়ন নক্ষত্রসহ একটি নিখুঁত ছবি। যা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিটির এখন পর্যন্ত তোলা সবচেয়ে নিখুঁত ছবি। এই ছবি সবাইকে বিস্ময় করে দেয়। এই ছবিটি ডাউনলোড করতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ৫৮.১২ মেগা বাইট! তাহলে বুঝতেই পারছেন।

ছবিটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন

তথ্যসূত্র:
https://en.wikipedia.org/wiki/Gaia_(spacecraft)
https://www.esa.int/Our_Activities/Space_Science/Gaia
https://www.space.com/41312-gaia-mission.html
http://sci.esa.int/gaia/

ইসলামের গোড়ামি এবং একটি নিরীহ প্রাণীর জীবন

সাপ সম্পর্কে ইসলাম

"ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ ভয়ে সাপকে ছেড়ে দেবে যে, সে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। কেননা, যখন থেকে আমরা সাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, তখন থেকে আমরা সাপ হতে নিরাপদ নই।"
 - সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ৩৮/ সালাম হাদিস নম্বরঃ ৫১৫৮

"সাপ" শব্দটি শুনলেই অনেকে চমকে উঠে। যেনো কোনো অশুভ শক্তির প্রতীক। অনেকে তো প্রতিপক্ষকে "কালসাপ" বলে গালি দিয়েও বসে। সাপ দেখলেই, ঝাপিয়ে পড়ে মারার জন্য। আসলে সাপ কি সত্যিই আমাদের শত্রু? নাকি কোনো অন্ধবিশ্বাস এর পেছনে কলকাঠি নেড়ে আসছে?


প্রকৃতপক্ষে, সাপ একটি নিরীহ সরীসৃপ প্রাণী। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া এরা আঘাত বা বাধা না পেলে কাউকে আক্রমণ করেনা। কোনো উপায় না পেয়ে এরা কামড় দিতে বাধ্য হয়। সাপ পরিবেশের বন্ধু, আমাদেরও বন্ধু। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রাখতে সাপের অবদান অসীম। পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ এবং ইদুর সাপের প্রধান খাবার। সাপ এগুলো না খেলে আমরা হয়তো টিকতে পারতাম না। সাপের অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা অনেক অনেক বেশি। কিন্তু তারপরও আমরা সাপ কেনো হত্যা করি?

দাদী-নানী সহ প্রায় সকলের মুখে শুনতাম, ইসলামের নবী মুহাম্মাদের হিজরতের সময় কাফেরদের হাত থেকে বাচার জন্য তাঁর সাহাবী আবুবকরকে নিয়ে এক গুহায় পলায়ন করে। এসময় একটি সাপ আবুবকরকে কামড় দেয়। এ ঘটনা বা হাদিস প্রায় সকলের জানা এবং এই ধারনা থেকেই মুখে মুখে প্রচার হয় সাপ মারা সুন্নাত। আমার আশেপাশে সবাই বিশ্বাস করে সাপ মারলে আল্লাহ খুশি হয় এবং অনেক সওয়াব দেয়। আমিও তাই জানতাম। এবং ছোটবেলা না বুঝে অনেক সাপ মেরেছি। তাহলে আমার এই না বুঝে নিরীহ প্রাণী হত্যার দায় নিবে কে?  নিশ্চই ইসলাম!

তখন অনলাইন ঘেটে সত্যতা পাওয়ার কোনো উপায় ছিলো না যে, সাপ মারলে আসলে সওয়াব হয় কিনা। কারন তখনতো মোবাইল কি সেটাই জানতাম না। অনলাইন তো অনেক দুরের কথা। চোখের সামনে অনেক সাপকে হত্যা করতে দেখেছি। গ্রাম এলাকায় সাপ মেরে পুড়িয়ে ফেলা হয়, যেনো তারা প্রতিশোধ না নিতে পারে। অবুলা এই প্রাণীর ঘাড়ে এই "প্রতিশোধ" এর কলঙ্ক কে ঝুলিয়েছে, আসুন খুজে বের করি।

"হজরত ইয়াজিদ ইবনে মাওহাব (রহ.) আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন—একদা আমি আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কাছে এসে বসি। এ সময় আমি তাঁর চৌকির নিচে কিছুর আওয়াজ শুনতে পাই। আমি তাকিয়ে দেখি যে একটি সাপ। তখন আমি দাঁড়ালে আবু সাইদ (রা.) জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কী হয়েছে? তখন আমি বললাম, এখানে একটা সাপ আছে। তিনি বলেন, তুমি কী করতে চাও? তখন আমি বললাম, আমি তাকে মেরে ফেলব। তখন তিনি তাঁর বাড়ির একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বলেন, এখানে আমার চাচাতো ভাই থাকত। খন্দকের যুদ্ধের সময় সে রাসুল (সা.)-এর কাছে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুমতি চায়। কেননা সে তখন নতুন বিয়ে করেছিল। তখন রাসুল (সা.) তাকে অনুমতি দেন এবং বলেন, তুমি তোমার হাতিয়ার নিয়ে যাও। সে নিজ ঘরে ফিরে তার স্ত্রীকে ঘরের দরজার ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তার (স্ত্রীর) প্রতি কলম দিয়ে ইশারা করে। তখন তার স্ত্রী বলল, তাড়াহুড়ো কোরো না। এসে দেখো কী যেন আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। তখন সে ঘরে ঢুকে একটি কুিসত সাপ দেখতে পায়। সে তাকে বল্লম দিয়ে হত্যা করে এবং বল্লমে তার দেহ ফুঁড়ে বাইরে নিয়ে আসে।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না, এরপর কে আগে মারা গিয়েছিল—লোকটি, না সাপটি। তখন তার জাতির লোকেরা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেছে, আপনি দোয়া করুন, যাতে আমাদের সঙ্গী বেঁচে যায়। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করো।’ এরপর তিনি বলেন, ‘মদিনার একদল জিন ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাই তোমরা যখন তাদের (সাপ) কাউকে দেখবে, তখন তাকে তিনবার ভীতি প্রদর্শন করবে যে আর বের হবে না, অন্যথায় মারা পড়বে। এরপর যদি সে (গর্ত থেকে) বের হয়, তখন তাকে মেরে ফেলবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৬৭)"

উপরের হাদিসটিতে বলা হয়েছে, জিনেরা সাপ হয়ে মানুষের সামনে আসে। এবং তাদের তিন বার ভয় দিলেও যদি বের না হয় তাহলে বুঝতে হবে ওটা জিন না, অরিজিনাল সাপ। এবং তাকে মেরে ফেলতে হবে। তার অর্থ হচ্ছে, ইসলামে সাপ মারতে বলা হয়। ইসলামী ভাস্যমতে যেহেতু জিনেরা সাপ হয়ে আসে সেহেতু তারা প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

তাহলে পাঠক কি বুঝলেন? একটি গোড়ামি উক্তিকে কেন্দ্র করে, পরিবেশের একটি অন্যতম উপাদান এবং একটি প্রাণীকে নির্বিচারে হত্যা করে, নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।

সাপ কি সত্যিই প্রতিশোধ নেয়? সাপ কি তার শত্রুকে চিনে রাখে? উত্তর - না। সাপের মস্তিস্ক খুবই ছোট। এবং এটা অবশ্যই সম্ভব।  কিন্তু তা হতে হবে কোনও সস্তার সিনেমা বা অতি খাস্তা বাংলা বা হিন্দি সিরিয়াল। সাপের স্মৃতিশক্তি বা বুদ্ধি নেই। এবং এরা কিছুই মনে রাখতে পারেনা। তারা শুধু এটুকু জানে, বাঁচতে গেলে খেতে হয়, খেতে গেলে হত্যা করতে হয়। নিজের শক্তি সম্পর্কে তার ধারণা রয়েছে। নিজের আকার সম্পর্কে সাপ ওয়াকিবহাল। আর রয়েছে যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সাপ মানেই বিষধর নয়। পৃথিবীতে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৫০০ প্রজাতির সাপ বিষধর। আমাদের দেশে প্রায় ১০০ প্রজাতির সাপ থাকলেও বিষধর সাপ রয়েছে মাত্র ২০ প্রজাতির।

আসুন আরও একটি হাদিস দেখি -

আমর ইবনু মুহাম্মদ আন নাকিদ (রহ.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘সব সাপ মেরে ফেলো।  বিশেষ করে পিঠে দুটি সাদা রেখাবিশিষ্ট ও লেজ কাটা সাপ।  কেননা এ দুটি গর্ভপাত ঘটায় এবং দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেয়।’ 

বর্ণনাকারী বলেন, ‘ইবনে ওমর (রা.) যে কোনো সাপ দেখলে মেরে ফেলতেন।  একদিন আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনজির (রহ.) তাকে দেখলেন যে, তিনি একটি সাপ ধাওয়া করছেন।  তখন তিনি বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বাড়িঘরে অবস্থানকারী সাপ মারতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম : ৫৬৩১)। 

বিশিষ্ট কলা বিজ্ঞানী (চায়ের দোকানের বিজ্ঞানী) ছাড়া এ উক্তি কোনো সুস্থ/শিক্ষিত মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না যে, সাপের পিঠের সাদা দাগ ও লেজ কাটা, গর্ভপাত ঘটায় আর মানুষের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়ে অন্ধ বানিয়ে দেয়। আজ পর্যন্ত এমন কোনো রোগী পৃথিবীতে দেখা গিয়েছে কিনা আমার জানা নাই। একটা নিরীহ প্রাণীর পিঠে এতো মিথ্যা অপবাদ চাপাতে তাদের কিঞ্চিৎ পরিমাণ দ্বিধাবোধ হয়নি। আর হবেই বা কেনো? তাদের মতে মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব। দুঃখিত। মানুষ না পুরুষ। আর বাকিরা তাদের ভোগ্য বস্তু।

লেখক - মোমিন শেখ

অভিজিত রায় - যার রক্তে ভিজে আছে মুক্তচিন্তার রাজপথ

অভিজিত রায়
"আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশে পাশের বহু কাছের মানুষজন বন্ধু বান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই, নেই কোন ঘৃণা। তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা।" - অভিজিত রায়

অভিজিত রায় বাংলাদেশের মুক্তমনাদের কাছে একটি অতিপরিচত নাম, যিনি কলমের শক্তি দিয়ে  ঘায়েল করেছিলেন জঙ্গিবাদ, মৌলবাদে বিশ্বাসীদের বুক। একারনে তার মুল্য হিসেবে তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছিলো নিজের প্রাণটা। মুক্ত মনের অধিকারী হওয়া বা মুক্ত পথের সন্ধান করা বড়ই কঠিন একটি কাজ। ভারতীয় উপমহাদেশে এই কাজটি কত বিপজ্জনক সেটি প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে অভিজিৎ রায়।

আবহমান কাল থেকেই অসংখ্য মানুষ ধর্মের নামে হানাহানি, বিবাদ, বিভাজন আর বিরোধে জড়িত। এই দল ঐ দলকে হত্যা করছে, এই দল ঝাপিয়ে পড়ছে ঐ দলের উপর, রায়ট, অযৌক্তিকভাবে ধর্মভিত্তিক দেশবিভাগ, কোটি কোটি মানুষের অসীম দুর্ভোগ। কিন্তু যারাই এঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছে তারাই হয়েছে লাশ। এভাবে আর কতদিন চলবে? মানবতা কি আজীবন মুখ থুবড়েই থাকবে?

তিনি চেয়েছিলেন আমরা প্রকৃতিকে চিনব বিজ্ঞানের মাধ্যমে, চিন্তা করব মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। শিশু থেকে আরম্ভ করে সবার মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা বিরাজ করবে, কোনো কিছুর আনুগত্য করা যাবেনা প্রশ্নহীনভাবে।

অভিজিত রায় ছিলেন একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী-মার্কিন প্রকৌশলী, লেখক ও ব্লগার। তিনি বাংলাদেশের মুক্ত চিন্তার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর প্রথম সাড়া জাগানো বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটির নামের মধ্যেই অভিজিৎ রায়কে খুঁজে পাওয়া যায়।

অভিজিৎ শুধু একজন বহুলপরিচিত লেখকই ছিলেন না, ছিলেন একজন অত্যন্ত প্রাণবন্ত মানুষ এবং একটি হৃদয়বান বাবা, স্বামী, ছেলে এবং বন্ধু। আমেরিকাপ্রবাসী অভিজিৎ ছিলেন একজন সক্রিয় ব্লগার এবং যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তক এবং নিরীশ্বরবাদীদের জন্য প্রথম বাংলা আন্তর্জালিক প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তমনা’র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শুধু বিজ্ঞান বা নাস্তিকতা নিয়েই লিখতেন না, তার লেখনী যে কোন ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যে কোন ধরনের অবিচার, কুসংস্কার অথবা বৈষম্যের প্রতিবাদে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলো। তার লেখা বই ও ব্লগগুলোর বিষয়ের ব্যপ্তির দিকে তাকালেই ওপরের কথাটার প্রমাণ মেলে।

২০১৫ সালে বই মেলা চলাকালীন সময়ে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে ঢাকায় যান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাবেলায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী একটি রিকশায় করে একুশে বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের নিকটে অপরিচিত দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সাক্ষীদের মতে, দুইজন দুষ্কৃতিকারী তাঁদের থামিয়ে রিকশা থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের কোপাতে থাকেন এবং তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর কাঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে এবং বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। উভয়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে যাওয়া হলে অভিজিৎ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মৃত্যুবরণ করেন। রাফিদা আহমেদ বন্যা চিকিৎসার শেষে বেঁচে যান।

আজ অভিজিত রায়ের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আজ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে যাত্রা শুরু হলো এথিস্ট বাংলা ব্লগের। চলো নিই মুক্তির স্বাদ।