ফেরাউনের লাশ এর আসল রহস্য - অলৌকিক নাকি উপকথা?

ফেরাউন বা দ্বিতীয় রামিসেস
লেখক - মোমিন শেখ
ইসলাম যে মিথ্যা একটি ধর্ম এবং কোরআন যে স্বঘোষিত নবী মোহাম্মাদের তৈরি গল্পের বই, তা প্রমানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে ফেরাউন নিয়ে সুরার আয়াত, যা ধর্মান্ধদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে ফেরাউন এর লাশের মুখরোচক গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। যা শুনলেই মনে হবে ইসলাম আসলেই একটা অলৌকিক ধর্ম। ফেরাউন সম্পর্কে কোরআনের ২৭ টি সুরায় ৭৫টি স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

"বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী, অত:পর তাদের পশ্চাদ্ভাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্ধেশ্যে, এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করলো, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া যার ইবাদত করে বনী ইসরাঈলরা। অতএব আজকের দিনে রক্ষা করছি আমি তোমার দেহকে যাতে তা তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নি:শন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।" (সূরা ইউনুস:৯২)। 


কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে, ফেরাউন নবী মুসাকে ধাওয়া করলে, এক সাগরের তীরে আসে। মুসার লাঠির আঘাতে সাগর শুকিয়ে রাস্তা হয়ে যায়, এবং তারা পার হয়ে ওপারে চলে যায়। ফেরাউন সেই রাস্তা দিয়ে পার হওয়ার সময় ডুবে মারা যায়। এবং আল্লাহ মানবজাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখানোর জন্য নিদর্শন হিসেবে ফেরাউনের লাশকে অক্ষত অবস্থায় রেখে দেয়, যা থাকবে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত। পরে সাগর থেকে উদ্ধার করে জাদুঘরে রাখা হয়।

বড় বড় নামের টাইটেলওয়ালা হুজুরদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে আরও জানা যায়, ১৯৮১ সালে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া মিতেরা মমি করে রাখা ফেরাউনের লাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার জন্য তা ফ্রান্সে পাঠাতে মিশর সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। ফেরাউনের লাশ সংক্রান্ত গবেষক টিমের প্রধান ছিলেন মরিস বুকাইলি। ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণ অন্য গবেষকদের উদ্দেশ্য হলেও বুকাইলি নিজে ফেরাউনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে উদগ্রীব ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা গবেষণার পর ফেরাউনের লাশে লবণের কিছু অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়।  ফলে স্পষ্ট হয় যে সাগরে ডুবেই ফেরাউনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার লাশ সাগর থেকে উঠিয়ে এনে মমি করা হয়। এবং সাথে সাথেই মরিস বুইকালি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

তাহলে এটাই কি আসল ঘটনা? মোটেই না। চলুন ফেরাউনের মমির আসল ঘটনা জেনে আসি। তবে তার আগে মরিস বুকাইলি সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক।

মরিস বুকাইলি ছিলেন একজন ফরাসি চিকিৎসক। ১৯৭৩ সালে, তিনি সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পরিবারের চিকিত্সক নিযুক্ত হন.একই সাথে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের পরিবারের সদস্যরা তার রোগী ছিল। মরিস বুকাইলি ইসলামের একজন একনিষ্ঠ গবেষক ছিলেন, তবে তিনি কখনো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই। - সুত্র উইকিপিডিয়া

মরিস বুইকালির নামে অভিযোগ আছে তিনি সৌদি আরব সরকারের টাকা খেয়ে একটা বই লিখেছিলেন ইসলাম সম্পর্কে। পরে সেই বই এর কড়া সমালোচনায় অন্য একটি বই বের করা হয়। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে লাশ নিয়ে গবেষনা কতটা নিখুত ছিলো। ফেরাউনের লাশে লবন পাওয়া গিয়েছিলো বলেই যে সেটা সমুদ্রে থাকবে এমন কোনো কথা নাই। প্রাচীনকালে লাশ মমি করতে হলে লবনের দ্রবনে ডুবাতে হতো।

এবার আসি আসল কথায়। 

ফেরাউন কার নাম?
ফেরাউন (Pharaoh) কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়। প্রাচীন মিশরীয় রাজাদের উপাধি ছিল ফারাও। আরবরা বলতো ফেরাউন। শুধু পুরুষ রাজা নয়, ফেরাউন শব্দটা মহিলা শাসকদের হ্মেত্রেও ব্যবহার করা হত। মিশরে ৩৩২ জন রাজা রাজত্ব করেছিলেন, তাদের সবাইকেই ফারাও/ফারাউন বলা হতো। কোরআনে কোনো নির্দিষ্ট ফিরাউনের নাম উল্লেখ করা হয়নি বরং উক্ত কাহিনীতে শুধুমাত্র ফেরাউন উল্লেখ করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অজ্ঞতা। আপনি শুধুমাত্র রাজা/প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী বলতে কাকে বুঝবেন?

ফেরাউনের লাশ কি সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়?
মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী, ফেরাউনের লাশ লোহিত সাগরের তলদেশ থেকে আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি একটি বড় রকমের মিথ্যাচার। নদী/সাগরের তলদেশ থেকে কোনো মমিই উদ্ধার করা হয়নি। ১৮৮১ সালে যেই মমিটি পাওয়া যায়, সেই মমিটি দ্বিতীয় রামিসেসের। তাঁর মমি উদ্ধার করা হয়েছে DB320 নামে একটা সমাধিতে। সেখানে দ্বিতীয় রামিসেস ছাড়াও আরও ৫০ টি মমি উদ্ধার করা হয় একই সাথে। তবে, দ্বিতীয় রামিসেসকে প্রথমে KV7 নামে একটা সমাধিতে রাখা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে Pinudjem II এর মমির পাশে DB320 এ স্থানান্তর করা হয়।

ফেরাউন বলে যাকে দাবি করা হচ্ছে, তার পরিচয় কি?
দ্বিতীয় রামিসেস নামের এই ফেরাউনের জন্ম (প্রায়) খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩; মৃত্যু জুলাই বা আগস্ট ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব; শাসনকাল হচ্ছে, ১২৭৯–১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব। তাকে রামিসেস দ্য গ্রেট বা মহান রামিসেস বলা হতো। তিনি ছিলেন মিশরের উনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা। যারা বলে থাকে তার লাশ সাগর থেকে তোলা হয়েছে, হয় তাঁর মিথ্যা বলে বা তারা আসলেই জানেই না আসল ঘটনা। রামেসিস ২ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

ফেরাউন কি সাগরের পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিলো?
ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী, ফেরাউন নবী মুসাকে ধাওয়া করতে গিয়ে সাগরের পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অথচ ফিরাউন বা দ্বিতীয় রামিসেস মৃত্যুবরণ করেছেন আর্থ্রাইটিস নামক এক রোগে। এটি প্রায়ই বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের হতে দেখা যায়। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, দ্বিতীয় রেমেসিস সাগরে ডুবে মরেননি। ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মাদ ওই সময় আবছা আবছা যা শুনেছিলো তাই ভুল করে কুরআনে লিখে রেখেছিলেন।

কোরআনে তো মুসা নবীর সাগর ভাগ করা আর ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার ঘটনা আছে। কিন্তু মোহাম্মাদ এত বছর আগে ফেরাউনের লাশের ভবিষ্যৎবাণী করলো কিভাবে?
ফেরাউন আর মুসাকে নিয়ে বানানো গল্প শুধু কুরআনে না, বরং পূর্বের কয়েকটি প্রধান ধর্মগ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে অনেক আগেই, যা ছিলো বিভিন্ন জায়গার আঞ্চলিক উপকথা মাত্র। মোহাম্মাদ হিব্রু বাইবেল থেকে সরাসরি কপি-পেস্ট করে কুরআনে ঢুকিয়েছে। এবং খাদিজার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। আর নবী মুহাম্মদের সময়কালে প্রাচীন মিশরীয় মমির কথা সকলেরই জানা ছিল। তাই ফেরাউনরা মৃত্যুর পর তাদের লাশ সংরক্ষণ করে রাখে মমি করে, এটা ইসলামের নির্মাতা মুহাম্মদ অবশ্যই শুনেছেন। তাই, কোরআনে ঐ সাগর দুই ভাগ হওয়ার কিচ্ছা ও লাশ সংরক্ষনের ঘটনা জুড়ে দেয়া নিশ্চয়ই কোনো মোজেজা নয়। কুরান ও বাইবেল লিখিত হওয়ার হাজার বছর আগেই যা ঘটে গেছে, সেই জানা ঘটনার উল্লেখ থাকা কোনো কৃতিত্বের কাজ নয়।

তাহলে ফেরাউনের লাশ এতো বছর ধরে এখনও অক্ষত থাকে কিভাবে?
নবী মোহাম্মাদ রচিত কোরআনে মাত্র একজন মানুষের লাশ অক্ষত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি মিশরের যাদুঘরগুলোতে যান, দেখবেন হাজার হাজার লাশ অক্ষত আছে এখনও। মিশর ছাড়াও আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া অঞ্চলের আরও প্রায় ২০-২৫ টি দেশে বহু মমি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, ঐ মমিগুলো কে সংরক্ষণ করেছে ভবিষ্যৎ নিদর্শন হিসেবে? চলুন দেখি কিভাবে মমি গুলো কিভাবে সংরক্ষন করা হতো।



প্রাচীন মিশরীয়রা ছিলো অত্যান্ত বুদ্ধিমান। তারা আধুনিক সভ্যতায় অনেক অবদান রাখে। মমি তৈরি করার জন্য তারা প্রথমে লাশের পেট কেটে শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অঙ্গ যেমন - ফুসফুস, বৃক্ক, পাকস্থলি ইত্যাদি বের করে আনতো। এসব অঙ্গ বের করার পর আবার পেট সেলাই করে দেয়া হতো। মগজ অর্ধতরল করে ফেলতো ও লোহার হুক দিয়ে টেনে বের করে আনতো। তারপর ন্যাট্রন লবণ সহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক লবণের দ্রবণে মাস তিনেক ডুবিয়ে রেখে তুলে আনা হতো। এরপর রোদে শুকানোর পালা। পরিপূর্ণভাবে লাশটা শুকিয়ে গেলে এটাকে ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী করে তৈরি করা এক ধরনের ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে ফেলা হতো। অবশেষে কাঠের বাক্সে প্যাকিং!

সুতরাং বোঝাই যায়, ইসলাম এবং কোরআন কতটা অলৌকিক। পুরোনো গল্প/উপকথা নতুন করে সাজিয়ে প্যাকিং করে বাজারজাত করার অর্থই হচ্ছে ইসলাম। আর বোকা মানুষদের মগজধোলাই করার জন্য শানে নুজুল তো আছেই।
Previous Post
Next Post
Related Posts

9 comments:

  1. আসাধারণ।রেফারেন্স দেওয়া থাকলে অন্যদের দেখাতে ভালো হত।

    ReplyDelete
  2. ভাই রেফারেন্স টা দিলে ভালো হতো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. রেফারেন্স যদি থাকে তবে তো দিবে। সব কিছু মনগড়া কথ।

      Delete
  3. আল্লাহ্‌ আপনাদের হেদায়েত দান করুক!

    ReplyDelete
  4. এটাতো আপনার মন গড়া কথা। সূত্র দিন কোনো বিশ্বস্ত সূত্র

    ReplyDelete
  5. আগে হযরত মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।তারপর মরিস বুকাইলী সম্পর্কে জানুন এইসব মনগড়া কথাগুলো লিখুন।।অযথা কোন কথা লিখে বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন।আল্লাহ হেদায়াত দান করুক

    ReplyDelete
  6. ভাই আপনি যে বললেন কুরআন মহানবী সাঃ এর লেখা তবে আমার এই ভিডিও লিংকে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিন। আর যদি না পারেন তবে আগে ইসলামকে জানুন এবং বুঝুন। মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন লিংক https://www.youtube.com/watch?v=uZaHPz7OVbQ

    ReplyDelete
  7. হাইরে আবাল,কুরআন যদি বিশ্বাস না করি তর কথাই কেন সত্য হবে? তর দেওয়া কাহিনিই কেন সত্য প্রমান কর?

    ReplyDelete
  8. অত্যন্ত আনন্দের যে এই নাস্থিক গুলা কখনো রেফারেন্স দিয়ে কথা বলে না সবসময় মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। কেউ কেউ কোন বই দেখালে তখন দেখা যাবে এই বইয়ের লেখক এ-ই একই ভাবে মনগড়া ভাবে উল্লেখ করেছে।এই নাস্তিক গুলারে যখন কোন রেফারেন্স দেখানো হয় তখন তারা মনে করে আমরা তাদের মগজ ধুলাই করার চেষ্টা করতেছি।

    ReplyDelete