জন্ম এবং মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ হবে মানুষের ইচ্ছায়

বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ হতে চলেছে অমর
আধুনিক বিজ্ঞান কি নিজেকে ঈশ্বর সমতুল্য করে ফেলছে? ফল খারাপ হবে বোঝা যাচ্ছে। জন্মেছো যখন, মরতেই হবে একদিন। এ ধরনের দুই একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হই প্রতিদিনই। বিজ্ঞানের  সাফল্যগুলো তুলে ধরতে গেলেই সমাজের কিছু লোক গোড়া মেরে দিবে আর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মত প্রকাশ করলে তো প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়ে যাবে। তাই বলে কি বিজ্ঞান থেমে থাকবে? নাহ। বিজ্ঞান থামবে না। চলবে তার আপন গতিতে। বরং থেমে যাবে তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস।

প্রতিটি প্রাণীর কাছেই তার নিজ জীবন সবচেয়ে প্রিয়। অতীতের স্মৃতি, মানুষের ভালোবাসা, পরিচিত মানুষের মুখ ও উপভোগ্য সময়ের কারনে পৃথিবীর প্রতি এক অদ্ভুত মায়া চলে আসে। সবাই জানে একবার পরলোকে পাড়ি জমালে আর ফিরে আসা যায় না। আর এ কারনে, মানুষ বেচে থাকতে চায় অনন্তকাল। সৃষ্টির ইতিহাসে মানুষের সবচেয়ে বড় একটি বাঁধা হল ক্ষনস্থায়ী জীবন। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ বিভিন্ন ভাবে মৃত্যুকে আটকাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো ভাবেই তা সম্ভব হয় নি। মূলত সেগুলোর বেশিরভাগ চেষ্টাই ছিলো অবৈজ্ঞানিক। তবে আশার কথা হলো, এবার তা সত্য হতে চলেছে।


এতোদিন মানুষ জেনে এসেছে জন্ম এবং মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। একুশ শতকে গতিশীল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দাপটে, শেষ এই কথাটিও আর ধোপে টিকছে না। মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিজ্ঞান পা দিতে চলেছে এক নতুন জগতে। জন্ম এবং মৃত্যুর দায়িত্ব থেকে ঈশ্বরকে অবসরে পাঠিয়ে মানুষ হাতে নিতে চলেছে এই গুরুদায়িত্ব। তবে এর জন্য মানবসভ্যতাকে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র ২০-৩০ বছর।

বিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যেই মানুষ অমরত্ব লাভ করার জন্য যে সব প্রযুক্তি দরকার তা গুছিয়ে ফেলছে। তবে এটি অত্যান্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। আমরা বাসায় বসে টিভিতে যে সিনেমা দেখি, এর পেছনে রয়েছে অনেক গুলো প্রযুক্তির সমন্বয়। শব্দ, আলো, রঙ, বিদ্যুৎ, স্থিরচিত্র, এনিমেশন সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি মিলে মিশে যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি হয়, ঠিক তেমনি মানুষকে বাচিয়ে রাখার জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক থেকে কাজ করে চলেছে। যেহেতু এটি অত্যান্ত নিখুদ একটি প্রক্রিয়া, তাই পরিপূর্ণ রেজাল্ট পেতে মানবজাতিকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটা বছর। তাহলে চলুন ঘুরে আসি অমরত্বের গবেষনাগার থেকে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জিন এডিটিং

মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের কোষের কার্যক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। যৌন কোষ ও রক্তের কোষ ছাড়া শরীরের প্রতিটি কোষেই থাকে ক্রোমোজোম থাকে ২৩ জোড়া করে। শরীরের ক্রোমোজমে যে ডিএনএ বা ডিঅক্সি-রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে, তার একটা ‘লেজ’ (টেল) থাকে। সেই লেজটার নাম ‘টেলোমেয়ার’। আমরা যতই বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকি, ততই আকারে ছোট হতে থাকে সেই টেলোমেয়ার। আমরা যদি সেই আকারে ছোট হয়ে যাওয়া টেলোমেয়ারকে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইল্যাস্টিকের মতো টেনেটুনে বাড়িয়ে দিতে পারি, তা হলেই বয়সের হিসেবে আমরা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেও, দেহে ও মনে চিরযুবাই থাকতে পারব।

তাছাড়া বায়ুদূষণ, ধূমপান ও মদ্যপানের মতো  বাইরের কোনও কারণও টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য উত্তরোত্তর কমিয়ে দিয়ে আমাদের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি, জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতি আগামী ১০ বছরের মধ্যেই বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে দূরে হঠিয়ে দেবে। ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র জেনেটিক্সের অধ্যাপক জোসে লুই কর্দেইরো ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ও জিনতত্ত্ববিদ ডেভিড উড সম্প্রতি তাঁদের প্রকাশিতব্য বই ‘দ্য ডেথ অফ ডেথ’-এ এই দাবি করেছেন।

এখনকার সময়ে ফটোশপের নাম শোনেনি এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। কোনো সাধারণ ছবিকে যেমন ফটোশপ এর মাধ্যমে এডিট করে ব্রন, পিম্পল, উজ্জলতা বাড়িয়ে সুন্দর করে তোলা হয়, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনেকটা ফটোশপের মত কাজ করে। জন্মের আগে থেকেই সন্তান কেমন স্বভাবের হবে, গায়ের রঙ, উচ্চতা সহ সব কিছুই আগে থেকেই কন্ট্রোল করা সম্ভব। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মরে যাওয়া কোষ, কলা (কোষের দল বা সমষ্টি, যাকে বলে টিস্যু)-গুলিকে শরীর থেকে বের করে আনা হয়। শরীরের যে কোষগুলি বিগড়ে গিয়েছে, যে ভাবে চলা উচিত, ঠিক সেই ভাবে চলছে না, বরং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে, সেই কোষগুলিকে জিনের প্রযুক্তি দিয়েই সারিয়ে তোলা হয়। সুতরাং এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের শরীর আজীবন রোগমুক্ত এবং সতেজ রাখা সম্ভব হবে।

বার্ধক্য রোধের ট্যাবলেট আবিষ্কার
কফির দামে পাওয়া ট্যাবলেট বার্ধক্য রোধ করবে

ধরুন আপনার বয়স ৬৫। কেমন হবে, যদি এমন একটি ট্যাবলেট পেয়ে যান, যা খেলে আপনার দেহের বয়স ২০ এ নেমে আসবে! ব্যাপারটা কেমন হবে ভেবে দেখেছেন? খুবই অবাক লাগছে তাই তো? তবে অবাক হওয়ার কারণ নেই। কারণ এই রুপকথা সত্যিই হতে চলেছে। একটি পিল খেয়ে ঠেকিয়ে দেয়া যাবে বার্ধক্য-এ রকম একটি ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে যা আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই বানিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। এবং এক কাপ কফির দামেই যদি পাওয়া যাবে এই পিল। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এই যুগান্তকারী গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড: ডেভিড সিনক্লেয়ার।

মানুষের বয়স বৃদ্ধিতে শরীরের চামড়া কুকচে যায়, কোষগুলো ক্ষমতা হারাতে থাকে। তখন আমাদের শরীরের ভেতর যেসব ছোট ছোট রক্তনালী আছে, সেগুলো বুড়িয়ে যেতে থাকে এবং এ পর্যায়ে একদম শুকিয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এবং পেশিকলায় রক্ত প্রবাহ অনেক কমে যায়। ড: ডেভিড সিনক্লেয়ার বলেছেন, মানুষের শরীরের অনেক রোগ-ব্যাধির মূল কারণ কিন্তু এই রক্তনালীর বার্ধক্য। বিশেষ করে বহু ধরণের হৃদরোগ, স্নায়বিক রোগ এটা থেকেই হয়।  রক্তনালীর ভেতরে রক্ত চলাচল বাড়ানোর জন্য নতুন ধরনের ঔষধ আবিস্কার সম্ভব হবে এই গবেষণার ভিত্তিতে।

গবেষকরা দাবি করছেন, এই বার্ধক্য প্রতিরোধী গবেষণা সফল হলে মানুষ দেড়শো বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সেল বা কোষ ব্যবহার করে একেবারে নতুন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তৈরি করা যাবে।

মস্তিস্কের বার্ধক্য রোধ
শরীরের সঙ্গে বয়স বাড়ে মস্তিষ্কেরও। একটা বয়স পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ হয়। তারপর ধীরে ধীরে ব্রেন সেলগুলির মৃত্যু ঘটতে শুরু করে। যার নির্যাস, চিন্তা-ভাবনার স্তর কমতে শুরু করা, ভুলে যাওয়া। তবে আর চিন্তা নেই। এবার বয়স বাড়লেও, মস্তিষ্ক থাকবে চিরযুবক। মস্তিষ্কের বার্ধক্য রোধের এই অবিশ্বাস্য প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন ওন্টারিও'র ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিত্‍‌সা বিজ্ঞানী। এই গবেষনা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানী জেনিফার লেমন। ৩০টি ভিটামিন ও মিনারেলের মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে একটি ওষুধ। ওই ওষুধ ব্রেন সেল নতুন করে তৈরি করবে। ফলে অ্যালঝাইমার, পারকিনসনের মতো অসুখ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকবেই না।

জেনিফার লেমন বলেন, ট্যাবলেটটি ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ব্রেন সেল ড্যামেজ হচ্ছে না। পুরনো সেল মরে গিয়ে, নতুন সেল তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি বাড়ছে, শরীর থাকছে চনমনে। লেমনের কথায়, 'অ্যালঝাইমার, পারকিনসনের মতো স্নায়ুরোগ ঠেকাতে এই আবিষ্কার যুগান্তকারী হতে চলেছে। একটি ট্যাবলেটেই মস্তিষ্কের বার্ধক্য থেমে যাবে এবং হয়ে উঠবে চিরযৌবন।

স্মৃতি সংরক্ষণ
মানব মস্তিষ্ক
মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মস্তিষ্ক। আমাদের সকল স্মৃতি, ইতিহাস, পরিচিতি সবই মস্তিস্কে জমা থাকে। এক কথায় এটি হচ্ছে মানবযন্ত্রের হার্ডডিস্ক। তাই, মানুষের অমরত্বের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে ব্রেইন এর ব্যাকআপ তৈরি করা। আমাদের ব্রেইনের মেমোরি ধারণ ক্ষমতা কমপক্ষে ২ দশমিক ৫ পেটাবাইট অথবা ১ মিলিয়ন জিবি বা ১০ লাখ গিগাবাইট। অধ্যাপক পল রেবর উল্লেখ করেছেন, ব্রেইন যদি কোন সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারের মত মেমোরি ধারণ করে তাহলে সেই মেমোরি যদি কোন টিভিতে অবিরাম সম্প্রচার করা হয় তাহলে ৩ শতাধিক বছর লাগবে তা প্রচার করতে। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের মনকে কম্পিউটারে কপি করে রাখা সম্ভব। তবে কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ বা মেমোরিকার্ড এর সাথে মানুষের ব্রেইনের মেমরি আকাশ পাতাল পার্থক্য। আর এ জন্য এটি সবচেয়ে জটিল প্রকৃয়া।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ব্রেইনে ৮৫-৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকে,  প্রত্যেকটি নিউরন একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত থাকে। একটি নিউরন প্রতি সেকেন্ডে ১,০০০ সংকেত পাঠাতে পারে। একটি গমের দানার সমপরিমাণ মস্তিষ্ক টিস্যুতে ১ লক্ষের মতো নিউরন থাকে, যেগুলো পরস্পরের সাথে এক বিলিয়ন বন্ধন তৈরি করে। নিউরন হলো স্নায়ুতন্ত্রের ইট। এই ইটে নির্মিত স্নায়ুতন্ত্র দিয়েই আমরা অনুভব করি আশপাশের সবকিছুকে। ঠান্ডা কিংবা গরমের অনুভব, ভালো কিংবা মন্দ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত সহ আপনার আমার জীবনের সবগুলো কাজের সাথে জড়িত এই স্নায়ুতন্ত্র।


প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যধারা ও মনের অলিগলি এখনই কম্পিউটারে অল্প পরিমাণে হলেও ধরা সম্ভব হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রযুক্তি দিয়েই মানুষের সব চিন্তাধারার প্রক্রিয়াকে আবেগের সংমিশ্রণসহ হয়তো কম্পিউটার গ্রোগ্রাম হিসেবে আপলোড করা সম্ভব হবে। তাতে জৈব দেহের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে মানুষের। প্রাথমিক ভাবে, মানুষের আদলে কোনো যন্ত্রের মগজেই বেড়ে উঠবে একটি মানুষ নয়তোবা মানুষ মারা গেলে তার স্মৃতিসমূহ সংরক্ষরণ করে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এখন যেমন কম্পিউটারে আমরা একটি সিনেমা সংরক্ষণ করি অনেকটা সেরকমভাবে। তবে আস্তে আস্তে তা আরও রিয়েলিটির দিকে ধাবিত হবে।

গবেষকরা বলছে, আগামী দুই এক দশকের মধ্যেই মস্তিস্কের নিউরন তৎপরতার মানচিত্র তৈরি সম্ভব হবে। যদি মানুষের ব্রেইন কপি করে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়, তাহলে কোনো দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুর হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মৃত্যুর পর কম্পিউটারে থাকা ব্রেইন অন্য একটি দেহের মস্তিস্কে লোড করে দিলেই  আগের মত জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব। এভাবে মানুষের পক্ষে হাজার হাজার বছর বেচে থাকা একবারেই সহজ হয়ে যাবে।

থ্রি-ডি প্রিন্টেড অঙ্গ
থ্রি-ডি প্রিন্টেড হৃদযন্ত্র
দেহকে সতেজ রাখলাম, রোগ জীবানু থেকে দূরে থাকলাম, মস্তিস্কের সুরক্ষা করলাম, স্মৃতি কপি করলাম। কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যদি কোনো দুর্ঘটনায় আমাদের অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ বিচ্ছিন্ন বা নষ্ট হয়ে যায়, অথবা কোনো এক প্লেন ক্রাশে আমার সম্পূর্ণ শরীর ঝলসে গেলো বা সমুদ্রে নিখোজ হয়ে গেলাম। তাহলে কিভাবে অমরত্ব পাবো? কিন্তু এই সমস্যারও সমাধানের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে বিজ্ঞানীরা। আর তা হলো থ্রি-ডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়ের মতো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ‘খেলতে খেলতে’ বদলে দিতে পারি, নতুন নতুন তরতাজা ‘থ্রি-ডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে। স্টেম সেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন রোগজীর্ণ অংশ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে অনায়াসে সারিয়ে ফেলতে পারি। কেও ইচ্ছা করলেই এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের হুবহু কপি তৈরি করে রেখে দিতে পারবে আগে থেকেই।

ইতিমধ্যেই গবেষণাগারে কৃত্তিম পাজর, চোখের কর্নিয়া সহ অনেক অঙ্গপ্রত্যাঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২-১ বছরের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে কৃত্তিম রক্ত। কৃত্রিম রক্তের প্রথম ব্যবহার হতে পারে দুর্লভ ব্লাড গ্রুপের মানুষদের ক্ষেত্রে। গবেষকেরা দাবি করেছেন ইতোমধ্যেই তারা কয়েক লিটার রক্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

আপনি জেনে আরও অবাক হবেন যে, আমাদের বাংলাদেশী মার্কিন জৈব-প্রকৌশলী ড. শুভ রায় এর নেতৃত্বে আবিস্কৃত হয়েছে প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি। কিডনির দুস্প্রাপ্যতার সমস্যা সমাধানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই সাফল্য অভূতপূর্ব। এই প্রযুক্তি সাশ্রয়ী মূল্যে এই বছরই অর্থাৎ, ২০১৯ সালেই পৌঁছে যাবে বিশ্বের লাখ লাখ রোগীর কাছে।

তাহলে একটু ভাবুন, মানুষের মৃত্যুর কারণ গুলো কি কি? দুর্ঘটনা, ক্যান্সার বা জটিল রোগ, বার্ধক্য। এদের প্রত্যেকটি সমস্যা সমাধানের কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকি আর কয়েকটা যুগ।

আজ থেকে দুইশ বছর আগে গিয়ে যদি কাউকে বলি, মোবাইল নামক একটি যন্ত্র আসবে, এবং তা দিয়ে বাংলাদেশে বসে অ্যামেরিকার মানুষের সাথে কথা বলা যাবে। তাহলে পাগল বলে পিটিয়ে মারা হতো নির্ঘাত। কিন্তু সত্য এটাই, যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা ও প্রযুক্তির সম্মিলন মানুষকে বহু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। বিজ্ঞান ছুটছে জ্যামিতিক গতিতে। মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে চলেছে এটাই সত্য, এবং খুব শীঘ্রই। তবে কিছু মানুষ এর অপব্যাবহারও করবে। কিন্তু অমরত্বের সদ্ব্যবহারই হবে মানুষের প্রধান লক্ষ্য। যে যেভাবেই সমালোচনা করুক, বিজ্ঞান কোনো বিশ্বাসের ধার ধারেনা। কেউ সীমা বেধে দিলে বিজ্ঞান তা ডিঙিয়ে চলা শুরু করে।

লেখক - মোমিন শেখ

সুত্র-
https://www.nationalgeographic.com/magazine/2018/03/explore-wellness-3D-printing-body-parts/
https://en.wikipedia.org/wiki/Genetic_engineering
https://www.nature.com/subjects/genetic-engineering
https://en.wikipedia.org/wiki/Mind_uploading
http://www.minduploading.org/
https://www.bbc.com/bengali/news-45389167
https://www.anandabazar.com/others/science/by-2045-death-will-be-optional-claims-two-genetic-engineers-dgtl-1.888138
https://www.timesnownews.com/health/article/a-new-affordable-anti-ageing-pill-that-could-help-humans-live-upto-150-years/280448
Previous Post
Next Post
Related Posts

10 comments:

  1. nice news.I am very happy to know it.

    ReplyDelete
  2. তাই! পুরাণিক কাহিনী গুলোর কথা মনে পড়ে গেল!!!! স্বেচ্চায় দেহ ত্যাগ! যদিও পুরাণ বানোয়াট কাহিনী?

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by a blog administrator.

    ReplyDelete
  4. এটা কখনোও সম্ভব না।কখ্খনো না

    ReplyDelete
  5. লেখক সাহেব আপনার মাথা খারাপ হয়েছে।

    ReplyDelete
  6. ইস্ আমরা যদি পেতাম

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহা রে,মোর সাধের যৌবন।

      Delete
  7. তারা তারি আসুক,মানুষ হালায় অন্ধকারে আছে। এবার দেখুক বিজ্ঞানের কারিসমা।

    ReplyDelete