ইসলাম ধর্ম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ অসম্মান

ইসলামী পর্দার বিধান
মুসলমানরা একটি কথা বরাবরই বলেন যে, একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীদেরকে দিয়েছে  মানবাধিকার এবং উচ্চ মর্যাদা যা অন্য কোনো ধর্মে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আসলেই কি তাই? নাকি তাঁর সম্পূর্ণ বিপরীত? ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে কি ধরনের অধিকার দিয়েছে, ইসলামের চোখে নাড়ি কেমন, তাদের কাজ কি ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন প্রথমে কুরআন খুলে সুরা বাকারার ২২৩ নাম্বার আয়াতে একটু চোখ বুলাই।

তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। তাই তোমাদের শস্যক্ষেতে যাও, যেভাবে তোমরা চাও। নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা করো। আর আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান! জেনে রেখো তোমরা তাঁর সামনা সামনি হতে যাচ্ছো। আর যারা পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে গেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও। [আল-বাক্বারাহ ২২৩]


“তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। কত বড় অপমানকর কথা! ইসলাম নারীদেরকে মানুষ মনে করে না, চাষের জমি মনে করে? তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো। নারীরা কি পুরুষদের সম্পত্তি যে, যখন যা খুশি করবে? এই হচ্ছে ইসলামে নারীর সম্মান? ইসলাম না বড় গলায় বলে যে, এটা নারীদের অধিকার দিয়েছে? এই হচ্ছে তার নমুনা? ইসলামে নারী হচ্ছে স্বামীর শস্যক্ষেত্র। কিন্তু নারী কেনো শস্যক্ষেত হতে যাবে? তারা কেনো পুরুষের দাসী হয়ে জন্মাবে?

রাসুল (সাঃ) বলেছেন- “পুরুষেরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর বা সুগন্ধি মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করে তাহলে সে একজন যিনাকারী মহিলা হিসাবে গণ্য হবে” (আহমাদ ৪/৪১৮, ছহীহুল জামে হাদীছ ১০৫)

ভেবে দেখুন, পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতে সব জাইগায় নারীদের অবদান। বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়। মিশতে হয় নানা-ধরনের মানুষের সাথে। এঅবস্থায় যদি তাদের শরীর দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টি কেমন হবে? প্রিয় নবী মোহাম্মাদ কি এটাই চেয়েছিলেন? সমাজে নারীকে হেই করা হোক। তাদের ঘরে বসিয়ে রাখা হোক। তাহলে নারীকে সমান অধিকার কিভাবে দিলো ইসলাম? আর সর্বোচ্চ সম্মানই বা দিলো কিভাবে? এটা কি তাদের শুধু গলাবাজি নয়?

প্রথমেই বলে নেই ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মোহাম্মাদ ছিলেন একজন পুরুষতন্ত্রবাদী। (পুরুষতন্ত্রবাদ জিনিসটা কি তা আমি এই লেখায় উল্লেখ করছিনা অবশ্য)। তবে কোরআন ও বিভিন্ন হাদিস থেকে সুস্পষ্ট ভাবে জানা যায়, তিনি দশাধিক  বিয়ে করেছিলেন। বয়স ২৫ বছর থাকাকালীন মোহাম্মাদ তার নিজের চেয়ে ১৫ বছরের বড় এক নারীকে (খাদিজা) বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে মোহাম্মাদের অনেক অনুসারীরা যুক্তি দেখান যে, তাদের প্রিয় নবী একজন ভালো এবং উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি একজন বয়স্কা নারীকে বিয়ে করে উদার মনের পরিচয় দিয়েছিলেন।

সত্যি কি তাই? খাদিজাকে বিয়ে করে মোহাম্মাদ মোটেও উদারতার পরিচয় দেননি। তাকে খাদিজার পছন্দ হয়েছিলো আর খাদিজা মোহাম্মাদকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মোহাম্মাদ রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। মোহাম্মাদ নিজেকে নবী দাবী করার পর খাদিজা তার কথা বিশ্বাস করে মোহাম্মাদের সেই ‘কল্পিত ঈশ্বরের’ (আল্লাহর) ধর্ম কবুল করেন। মোহাম্মাদের জীবনে ইনি ছিলেন প্রথম নারী যিনি মোহাম্মাদকে ভালোবেসে তার বানানো পুরুষতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করেছিলেন। মোহাম্মাদ এরপর যতগুলো বিয়ে করেন সবগুলোর ক্ষেত্রেই উনি নিজের বানানো মতবাদ তার সঙ্গিনীর উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন।
অথচ তিনি একবারও নারীদের বাইরে ঘোরাফেরা করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেননি, যেটা ইসলাম ধর্ম আসার আগেও আরব সমাজে মোটামুটি ছিলো। এবং এটা পুরোপুরি খর্ব করে তাদের উপর আপাদমস্তক পর্দা চালু করে দেন। কিন্তু এই বোরখা-হিজাব আসলে আরবীয় বা মরুভুমির পোষাক। যা অন্যান্য দেশের পরিবেশ-আবহাওয়া এবং কালচারের সাথে যায় না। এ ধরনের পোষাকগুলো বালুঝড়, লু হাওয়া বা তীব্র রোদ থেকে বাচার জন্য আরবীয় দেশ গুলোতে পরা হতো। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতে, ইসলাম তো পুরো পৃথিবীর জন্য। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীর সকল দেশে একই আবহাওয়া অথবা ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন পোষাকের নিয়ম করে দেওয়া কি উচিৎ ছিলোনা?

"হে নবীপত্নীগণ,... তোমরা নিজের গৃহে থাকবে; প্রাচীন যুগের মত নিজেদের  প্রদর্শন করে বেড়িও না।" (সূরা আহজাব এর ৩৩নং আয়াত)

উপরের আয়াত থেকে বোঝা যায়, আরব সমাজে ইসলামের আগে নারীদের যে অধিকার ও স্বাধীনতা ছিলো। যা ইসলাম আসার পরে হরণ করা হয়। নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা একই বিষয়ের কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

"বিবি আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেনঃ নারীগণ তখন যে ধরণের চালচলন এখতিয়ার করিয়াছে তাহা  যদি  রসুল (সঃ) দেখিতেন, তবে নিশ্চয় তাহাদিগকে বাইরে বাহির হইতে বাঁধা  দিতেন।" (বোখারী)

সূরা নূর এর ৩১ নম্বর আয়াত দেখা যাকঃ

"আর মুমিন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর তারা যেন স্বীয় সাজসৌন্দর্য না দেখায়, তবে যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় । তা ছাড়া তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে। এবং তারা কারো সামনে তাদের সাজসৌন্দর্য প্রকাশ করবে না এই মাহরাম আত্মীয়গণ ব্যতীত যথা স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, ভ্রাতা ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত, বাঁদী, নারীর প্রতি স্পৃহাহীন সেবক, ওই সব বালক যারা নারীর গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়নি। তারা যেন পথচলার সময় এমন পদধ্বনি না করে যাতে তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য পদধ্বনিতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম হও।"

নারী হাটতে গেলে পায়ে শব্দ করতে পারবে না, সুগন্ধি মাখতে পারবে না এবং করকশ কন্ঠে কথা বলতে হবে। এ ধরনের বর্বর নিয়ম মেনে চলা কোনো মেয়ের পক্ষেই অসম্ভব ব্যাপার। ইসলাম ধর্মে নারী হচ্ছে গোপন এবং একটা নিষিদ্ধ 'জিনিস'। হ্যাঁ, জিনিসই। ইসলাম নারীকে মানুষ নয় শুধুই একটা জিনিস মনে করে। যেখানে নারীরা ইসলাম ধর্মে শুধুই  একটা 'যৌনবস্তু' এবং শুধুই স্বামীর যৌনখাবার সেখানে তাদের মর্যাদা এবং মানবাধিকার দেওয়া হয়েছে এই ধরণের কথা মুমিন ধার্মিকরা এত উচু গলায় করে বলে কিভাবে, সেটাই বোধোদয় হয় না।  ইসলাম ধর্মে নারীদের কেমন চোখে দেখা হয়, শুনুন হুজুরের মুখ থেকে।


নারীর জন্ম হচ্ছে কলঙ্ক। নারীর জন্ম হয়েছে পুরুষের সেবা করার জন্য। নারী হচ্ছে বাড়ির আসবাবপত্রের মতই একটি সম্পদ। চাইলে বিক্রি করাও যাবে? নারীর হাত হারাম, পা হারাম, শুধু সেক্স আরাম, তাই তো? আর এটাই হচ্ছে ইসলাম হতে প্রাপ্ত নারীর সর্বোচ্চ সম্মান।

ইসলাম মনে করে, নারীদের আবৃত করে না রাখলে পুরুষরা তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়বে। পুরুষরা হিংস্র এবং নারী হলো ভোগ্য বস্তু। কিন্তু তাদের এই মতবাদ শুধু নারীকেই ছোট করে না বরং সকল পুরুষদেরও চরম অপমান করা হয়।

‘হে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)! স্ত্রীগণকে বলে দিন যে তারা যেন চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়, এতে তাদের চেনা সহজতর হবে ফলে তাদের কেউ উত্ত্যক্ত করবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা আহজাবঃ আয়াত-৫৯)

তাহলে নারীদের পোষাকের কারনেই পুরুষরা উত্যাক্ত বা ধর্ষণ করে? বিভিন্ন উন্নত সভ্য দেশে (আমেরিকা, ফ্রান্স বা অস্ট্রেলিয়া) নারীরা শার্ট-প্যান্ট পরে, স্কার্ট পরেন, ন্যুড বীচে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কই তাদের তো কেউ ধর্ষণ করেনা! হ্যা তবে ধর্ষণ হয়। কিছু অসুস্থ মানুষিকতার মানুষই ধর্ষণ করে, যারা নারীকে বন্ধুসুলভ না হয়ে ভোগ্য পন্য বা বস্তু মনে করে। অবৈজ্ঞানিক ও যুক্তিহীন ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো মাথা ব্যাথা হলে ওষুধ না খেয়ে মাথা কেটে ফেলা।

মোহাম্মাদের নীতি অনুযায়ী নারীদেরকে তাদের মুখমণ্ডলসহ শরীর ঢাকতেই হবে কারণ তা
না হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। একে কি মানবাধিকার বলে নাকি 'নারী-অবমাননা' বা 'নারীদেরকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা' বলে? (বোরকা বা পর্দা প্রথা একধরণের কারাগারের মত নয়?)

পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষই স্বাধীন। কাউকে আঘাত বা ক্ষতি না করে যে কোনো কাজ করার অধিকার একটা মানুষের থাকা উচিৎ। কিন্তু ইসলাম কি নারীদের তা দিয়েছে?

"যদি আমি অন্য কাউকে সিজদা করতে আদেশ দিতাম তাহলে নারীদেরই বলতাম তাদের  
স্বামীদের সিজদা করতে।" - মিশকাত

এ হাদিসের মাধ্যমে বোঝানো হয় পুরুষ হচ্ছে নারীদের দ্বিতীয় ঈশ্বর (যদি দুই ঈশ্বরের রীতি থাকতো)। তাঁর মানে, বিবাহিত নারীরা হচ্ছে পুরুষের দাসীর মত। তারা যা আদেশ করবে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে এবং অবাধ্য হলে কঠিন শাস্তি। এমনকি স্ত্রী স্বামীর কথা অমান্য করলে মার-ধোর দেওয়ার বিধানও রয়েছে ইসলামে। যা একেবারেই মানবতা বিরোধী।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নারী গোপন বস্তু সে পর্দার থেকে বের হলে তার উপর শয়তান তাকাতে থাকে। (অর্থাৎ মানুষদেরকে তার দিকে তাকানোর জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করে)। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস৩৪ নং-১১৭০)

ইসলামের এসমস্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা নারীদের অসম অধিকার প্রমাণিত হওয়ায়, আধুনিক ইসলামিক স্কলাররা ব্যাখ্যা ঘুরানোর পায়তারা শুরু করেছে। মোহাম্মাদের অনুসারীরা দাবী করেন, নারীকে শস্যক্ষেত্র বলা হয়েছে রূপক অর্থে। তাহলে রূপকটা এত ঋণাত্মক হলো কেন? কেন নারীদের নিজস্ব স্বকীয়তা পুরোপুরি বাদ দিয়ে তাদেরকে শুধুই স্বামীর যৌনখাদ্য এবং সন্তানসৃষ্টির যন্ত্র  হিসেবে রূপক বলা হলো? আসল কথা হলো পুরুষ নবীর অজ্ঞতা এবং নিজের ফয়দা উঠানোর জন্য নারীদের দমিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।

নারীদেরকে দূর্বল মনে করা পুরুষতন্ত্রবাদী ইসলামে, নারীদেরকে বাইরের সকল কাজ করতে নিষেধ। ইসলামী মতে তারা শুধু রান্না-বান্না, স্বামীর সেবা, আর রাত হলে স্বামীর শস্যখেত হয়ে যাবে। এটাই নারীদের সম্মান! এটাই সমঅধিকার। আর এ কারনে কারনে আমাদের দেশ সহ অধিকাংশ মুসলিম দেশেই নারীরা অনেক পিছিয়ে। অথচ উন্নত সভ্য দেশগুলোতে নারীরা বাইরে  স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করা সহ সামরিক বাহিনীতেও সৈনিক পদে কাজ করছে। আর মুসলমানরা দূর থেকে দেখে নাক সিটকায়। এতেও পুরুষদের যৌন উত্তেজনা উঠে যাওয়ার অজুহাত খাড়া করে।

নারীকে ঘিরে ইসলামের এসব বর্বরতাই প্রমাণ করে ইসলাম ধর্ম নারীকে দিয়েছে নারীকে সর্বোচ্চ অসম্মান।

লেখক – তুষার শামস জুয়েল
Previous Post
Next Post
Related Posts

0 Comments: